নবম শ্রেণির বইয়ে রাসায়নিক গঠন ও সংকেতের ভুল তথ্য
নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে রাসায়নিক গঠন ও সংকেতের ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্স বিভাগের গবেষক নাদিম মাহমুদ এক নিবন্ধে বিষয়টি সামনে এনেছেন। এতে তিনি ভুল তথ্য ও সঠিক তথ্যের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
তার তথ্য অনুযায়ী, রাসায়নিক গঠন উপস্থাপনে ভুল রয়েছে বইটির নবম অধ্যায়ের ৯.২ অনুচ্ছেদের ১৩৭ নম্বর পাতায়। এর ৯.৩ চিত্রে গ্লুকোজের ফিশার ও হাওয়ার্থ গাঠনিক উপস্থাপন করা হয়েছে। সাধারণত গ্লুকোজ ছয়টি কার্বন, ১২টি হাইড্রোজেন ও ছয়টি অক্সিজেন নিয়ে গঠিত হয়। তবে বইয়ে ছয়টি কার্বন ঠিক থাকলেও ১০টি হাইড্রোজেন ও পাঁচটিটি অক্সিজেন আছে।
বইটির রচয়িতারা ভারতের কোচিং সেন্টার বাইজুস ডটকম থেকে কপি করতে গিয়ে গ্লুকোজের স্ট্রাকচার থেকে হাইড্রোজেন কিংবা হাইড্রোক্সিল গ্রুপ উধাও করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ নাদিম মাহমুদের। তবে তারা দুটি সলিড বন্ড ফাঁকা রেখেছেন। রসায়ন নিয়ে গবেষণায় যুক্ত ব্যক্তিরা কেমড্র ব্যবহার করেন। তাঁরা ঠিকই সলিড বন্ডকে মিথাইল গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করবেন। রসায়ন জানা লোকজন গ্লুকোজের এ গঠনকে কখনোই স্বীকৃতি দিতে পারেন না বলে মত তার।
এ ছাড়া বইটির ৯.৩.১ অনুচ্ছেদের ৯.৫ চিত্রে ডিএনএর বর্ণনায় গুয়ানিনের গাঠনিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেটা ভুল উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, পিউরিন বেজের মলিকিউলের ৩ নম্বর নাইট্রোজেনই নেই। চিত্রটিতে ডিএনএর যে স্ট্রাকচার দেওয়া হয়েছে, সেটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। চিত্রে যে বর্ণনাও এসেছে, তা-ও ভুল। সাধারণত ডিএনএ ৫’ ও ৩’ এবং ৩’ ও ৫’ থাকলেও টেইল রঙের অ্যারো একই দিকে আছে, যা সাধারণ ভুল। বইটির ১৪২ নম্বর পাতায় ৯.৭ চিত্রে অ্যামিনো অ্যাসিডের গঠন আঁকতে গিয়ে অ্যামিনো গ্রুপকে ‘অ্যামিনো অ্যাসিড’ লেখা হয়েছে।
ভুল রাসায়নিক সংকেকের বিষয়ে তার ভাষ্য, বইয়ের অনেক জায়গায় রাসায়নিক সংকেত লেখার নীতি, সুপারস্ক্রিপ্ট ও সাবস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করার কথা ভুলে গেছেন লেখকেরা। ১৫১ নম্বর পাতার ১০.৪ অনুচ্ছেদে কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানি ও অক্সিজেনের সাবস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়নি। এমন ভুল দেখা দিয়েছে পর্যায় সারণি অধ্যায়ের ১০৫ পাতায়য়।
সোডিয়াম ও ক্লোরাইডের আয়নে সুপারস্ক্রিপ্টের ব্যবহার নেই জানিয়ে নাদিম মাহমুদ বলেছেন, অধ্যায়ের ৬.৩ চিত্রে পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে ঢেকে দিয়ে অধাতব ধর্ম ও ধাতব ধর্মে ক্রম দেখানোর জন্য ‘অ্যারো’ চিহ্ন দেখানো হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হতে পারে।
বইটির বেশির ভাগ চিত্রই নামানো হয়েছে ইন্টারনেট থেকে। এমন অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ইংরেজিতে ভাষান্তর করে ‘নিজেদের’ করে ফেলা হয়েছে এগুলো। ফলে স্বকীয়তার ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি। আগের বছরগুলোর বই ছেঁটে বিজ্ঞান বই সংকুচিত করা হয়েছে। এতে বিজ্ঞানশিক্ষার জানার ও প্রসারে বাধা তৈরি হবে। তবে বইয়ের মানবশরীরতন্ত্রের বিষয়গুলো মানসম্মত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: ভারতের কোচিং সেন্টারের লেখার নকল নবম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধান বইয়ে
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দশম শ্রেণির জন্য আলাদা বই পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে বইতে অনেক বিষয় আসবে। তবে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিদ্যাকে এক মলাটে আনতে গিয়ে বিজ্ঞানশিক্ষাকে কাটছাঁট করা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এসব বিষয় নিয়ে সোমবার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, নতুন পাঠ্যপুস্তকে বিভ্রান্তিকর কিছু থাকলে সংশোধন করা হবে। এ সময় তিনি শিক্ষাক্রমের বিরোধিতার নামে অপরাজনীতি না করার আহবান জানান। রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেনন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে মাদ্রাসা শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। এর ফলে তারা মাদ্রাসার জন্য প্রণীত পাঠ্যবইয়ে তাদের মতামত দেওয়া ও অবদান রাখতে পারবেন।