২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০১

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা সংখ্যা কমলেও উদ্বেগ কমেনি

  © সংগৃহীত

দেশে তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার প্রবণতা কমছেই না। প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায় তাদের আত্মহননের খবর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই থাকেন শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, দেশে মোট আত্মহননকারীদের মধ্যে এগিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা। দুশ্চিন্তা, পারিবারিক চাপ ও কলহ, প্রেমঘটিত কারণ, পড়াশোনোর চাপ, বেকারত্বসহ বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেকে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও কার্যত কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাই এ সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের একযোগে কাজ করার পাশাপাশি আত্মহত্যার প্রবণতাকে অপরাধ নয় বরং সমস্যা বলে চিহ্নিত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা, কারণ ও প্রতিকারের বিষয়ে প্রতিবছর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে দেশের অন্যতম সেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির ২০২৩ সালের আত্মহত্যা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বছরটিতে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১২ মাসে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ১৬৫ জনই অভিমান থেকে আত্মহননের পথ বেছে নেন। দেশের ১০৫টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যদিও সব আত্মহত্যার ঘটনা খবরে উঠে না আসাই এর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। 

২০২৩ সালে ৫১৩ জন আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীর ৪৪.২ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী, ২৭.২ শতাংশ কলেজ শিক্ষার্থী, ১৯.১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও ৯.৪ শতাংশ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। সেইসঙ্গে ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে পুরুষ ছিল ২০৪ জন, যা ৩৯.৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থী ছিল ৩০৯ জন, যা ৬০.২ শতাংশ—আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণা

আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়’ শীর্ষক এক বছরের ডাটা সমন্বয়ের ফলাফল তুলে ধরেন সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার লাবনী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলশিক্ষার্থীই সবচেয়ে বেশি। যার সংখ্যা ২২৭ জন বা ৪৪.২ শতাংশ। এরপরই রয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। যার সংখ্যা যথাক্রমে- ১৪০ জন (২৭.২ শতাংশ) ও ৯৮ জন (১৯.১ শতাংশ)। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮ জন (৯.৪ শতাংশ)। সেইসঙ্গে ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে পুরুষ ২০৪ জন, যা ৩৯.৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থী ৩০৯ জন, যা ৬০.২ শতাংশ।

এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বলেন, অনেক সময় নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে একই পারফরমেন্স করার পরেও একজনকে বেশি অন্যজনকে কম নম্বর দেওয়া হয়। নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। যা অনেক সময় মানসিকভাবে একজন শিক্ষার্থীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমার এক ব্যাচমেট প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার পরেও তাকে নিয়োগ না দিয়ে অপর জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে এখন একটি প্রতিষ্ঠানে নাইট গার্ডের কাজ করে এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে। তাই ইনজাস্টিস ও মানসিক কষ্টের কারণগুলো বের করে কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন: আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশই নারী, বেশি অভিমান ও প্রেমঘটিত

তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কয়েকদিন আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই আমি ঢাবির মেডিকেল সেন্টারে গেলাম। সেখানে দেখলাম কোনো ডাক্তার নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম ২১ জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন এই মেডিকেল সেন্টারে। বিষয়টি প্রশাসনের একজনকে জানালে ভিসি স্যারের নজরে আসে। পরদিন তিনি আমারে সাথে বসেন। ঢাবির মেডিকেল সেন্টারটিকে শক্তিশালী করতে একটি পজিটিভ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সময় ভিসি স্যার অটিস্টিক শিশুদের জন্যও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য পরামর্শ চান। জানতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পরিবারের প্রায় একশ শিশু অটিস্টিক। তাই আমি মনে করি এ সমস্যা নিয়ে ভিসি স্যারের সাথে যদি বসা যায় তাহলে সেন্ট্রাল একটি সমাধান হতে পারে।

পত্র-পত্রিকায় সব তথ্য নাও আসতে পারে তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ তো এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মানসিক সমস্যার কারণে কোথাও যায় বলে মনে হয় না। উপজেলার হেলথ কমপ্লেক্সগুলোতে গেলে দেখা যাবে এই হার আরও অনেক বেশি। 

একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন- একসময় এক শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে হঠাৎ করেই এ্যাবনরমাল আচরণ করছিল। তার এই সমস্যার কারণ ছিল একটানা ৪৫ মিনিট দেওয়ালের দিকে মুখ করে শাস্তি দিয়ে দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছিল তাকে।

এ সমস্যা নিরসনে আত্মহত্যাকে আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করে পাবলিক হেলথ ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ যতদিন এটি অপরাধ হিসেবে থাকবে ততদিন মানুষ এটি করার কথা কাউকে বলবে না। কারণ তারা জানে আত্মহত্যা পাপ ও অপরাধ। তাই তা সে নিজের মধ্যেই রেখে দেয়। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে দণ্ডবিধি থেকে সরিয়ে দিয়ে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সিতে রেখেছে। আমাদের ধীরে ধীরে এ উদ্যোগটা নিতে হবে— হেলাল উদ্দীন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট 

আত্মহত্যার প্রবণতা ও বিষণ্নতার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো রাত জাগা বলে জানান তিনি। এছাড়া কোনো সমস্যা হলে বিশেষ করে মেয়েরা কারো সাথে শেয়ার করে না। ফলে সমস্যাগুলো সামনে আসে না। তাই এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে একটি নির্ভরতার জায়গা তৈরি হয়। সবাই মিলে কাজ করলে আশা করি একটি ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে-উল্লেখ করেন সচিব।

এ সমস্যা নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একটা বড় ভূমিকা পালন করে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাড্রেস করি না। এজন্য সব প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করতে হবে। এজন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরও গুরুত্বপূর্ণ। 

২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৩২ জন। ২০২৩ সালে সংখ্যার দিক দিয়ে এ চিত্র কিছুটা কমলেও ততটা আশানুরূপ নয় বলে এ সময় জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সংখ্যায় কিছু কম বেশি হলেও আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টির কারণগুলো নিরসন হয়নি। এ বিষয়টি ফুটে ওঠে আঁচলের প্রতিবেদনেও। এতে বলা হয়, ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অভিমান, যা সংখ্যায় ১৬৫ জন (৩২.২ শতাংশ)। এরপরেই প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে ১৪.৮ শতাংশ। মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন ৯.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, পারিবারিক কলহে ৬.২ শতাংশ, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন ১.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই মানসিক চাপকে মোকাবেলা করতে পারে এমন প্রশ্নে এ সময় উপস্থিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আচঁল ফাউন্ডেশন অনেক পরিশ্রম বিনিয়োগ করে এসব কাজ করে থাকে। তবে এই গবেষণাগুলোর বিজ্ঞানভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলে ভালো হয়। 

তিনি বলেন, একটি কারণের পাশাপাশি আর কোনো কারণে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে কিনা সেটা বের করতে হবে। আমরা জানি না যে পড়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে হয়ত তার পারিবারিক অভিমানও ছিল। হয়ত পারিবারিক কারণে তার পড়ার চাপটি বর্ধিত হয়েছে। তাই এ সমস্যা নিরসনে মাল্টিপল বিষয় বের করা জরুরি যাতে গবেষণাগুলো আন্তর্জাতিক মানের হয়।

নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দেখছি আত্মহত্যাকারীদের প্রায় ৬১ শতাংশ নারী। এ সমস্যার অন্যতম কারণ শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। এর কারণ হচ্ছে আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার ভেতরে। আমরা মনে করি একজন নারী বড় পদে চাকরি করে বলে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। অথবা নারীর পড়াশোনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। এভাবে এটিকে নির্ধারণ করা যায় না। নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে একটি পারসেপশন, একটি ধারণা, একটি স্কুলিং। আমরা নারীকে সমাজে, পরিবারে কীভাবে দেখি তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি ঢাবির টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের কাউন্সেলিং সার্ভিস চালু আছে। ঢাবি ভিসি শিগগিরই অটিজম শিশুদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান করবেন। এছাড়া প্রতিটি হলে একজন করে কাউন্সিলর ও সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে বলে শুনেছি। 

তিনি আরও বলেন, এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেডিকেল শিক্ষার্থীও আছে ৬ জন। এর আগে আমাদের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় কোভিডের সময়ে দেড় বছরে ১২ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাই মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। 

এ সমস্যা নিরসনে আত্মহত্যাকে ডিক্রিমিনালাইজড করতে হবে। অর্থাৎ এটিকে একটি আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করে পাবলিক হেলথ ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ যতদিন এটি অপরাধ হিসেবে থাকবে ততদিন মানুষ এটি করার কথা কাউকে বলবে না। কারণ তারা জানে আত্মহত্যা পাপ ও অপরাধ। তাই তা সে নিজের মধ্যেই রেখে দেয়। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে দণ্ডবিধি থেকে সরিয়ে দিয়ে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সিতে রেখেছে। আমাদের ধীরে ধীরে এ উদ্যোগটা নিতে হবে— যুক্ত করেন এই বিশেষজ্ঞ।

এ সমস্যা নিরসনে তিনটি মন্ত্রণালয় একসাথে কাজ করতে পারে বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং নারীদের মধ্যে আত্মহননের হার বেশি হওয়ায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই বিশ্লেষক।

তিনি বলেন, আমাদের মেন্টাল হেলথের অপারেশনাল প্ল্যানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আত্মহত্যা কমানো। এসডিজির গোল অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে এর হার ১০ শতাংশ কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই আত্মহননের সমাধানের পথ হিসেবে বলতে চাই- আমাদের ৩ কোটি শিক্ষার্থীকে মেন্টরিং করা সম্ভব নয়। তাই পরিবারগুলোকে এবং স্কুলের শিক্ষকদের স্বাস্থ্যবান্ধব করতে হবে। 

২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৩২ জন। ২০২৩ সালে সংখ্যার দিক দিয়ে এ চিত্র কিছুটা কমলেও ততটা আশানুরূপ নয় বলে এ সময় জানান বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সংখ্যায় কিছু কম বেশি হলেও আত্মহত্যার প্রবণতা সৃষ্টির কারণগুলো নিরসন হয়নি। এ বিষয়টি ফুটে ওঠে আঁচলের প্রতিবেদনেও।

কোনো ধরনের ইমার্জেন্সি টিম গঠন করা যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সম্ভবত ২০২১-২২ সালের দিকে ১ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৯৯৯ এ আত্মহত্যার বিষয়ে কল করা হয়েছে প্রায় ১৫০০। এর মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক কেসে রেসপন্স করা সম্ভব হয়েছে। কারণ যিনি এ পথ বেছে নিচ্ছেন তিনি সার্ভিস নেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন না। আবার কল পেয়ে লোকেশন খুঁজে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রেসপন্স করাও কঠিন। সেই সঙ্গে সার্ভিস যারা দিচ্ছেন তারা কতটুকু দক্ষ তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাই সবকিছুর জন্য আগে প্রস্তুত হতে হবে।

আত্মহত্যার এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব বলেন, এ ক্ষেত্রে গবেষণাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পাশাপাশি পলিসি মেকিংকে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি কারণকে শুধু নয়, মাল্টিপল কারণ খুঁজে বের করে কাজ করতে হবে। শিশু কিশোরদের এটাচমেন্ট শক্তিশালী করতে হবে। 

তিনি বলেন, কিশোরদের মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে যে রিস্ক টেকিং বিহ্যাবিওর। ফলে তারা অনেক কিছুতে নিজ জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পরোয়া করে না। এ থেকে বাঁচতে তাদের বোঝাতে হবে যে জীবন একটাই। ব্যক্তি জীবন কোনো ভিডিও গেম না যে একবার চলে গেলে আবার ফিরে পাওয়া যাবে। 

এ সমস্যা নিরসনে ধর্মীয় লিডারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তাই ধর্মীয় লিডারদের বক্তব্য ও নির্দেশনা যদি পাঠ্যপুস্তকে আসে তাহলে এই সমস্যা নিরসন সহজ হবে বলে পরামর্শ দেন এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ। 

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ঢাবির ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, কোভিডের পর থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতিটি অনুষদেই এই বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি সেশনও করা হয়েছে।