স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বেশি আত্মহত্যা করেন, কম মাদ্রাসায়
গেল বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১২ মাসে মোট ৫১৩ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এরমধ্যে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মাঝে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। আর সবচেয়ে কম প্রবণতা ছিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের ২২৭ জনই অর্থ্যাৎ ৪৪.২ শতাংশ ছিলো স্কুলগামী। এছাড়া আত্মহত্যাকারীদের মাঝে কলেজগামী শিক্ষার্থী ছিলো ১৪০ জন যা শতাংশ হিসেবে ২৭.৩ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ছিলো ৯৮ জন যা ১৯.১ শতাংশ এবং আত্মহননকারীদের মাঝে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৮ জন যা ৯.৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোর বয়সে হরমোনজনিত কারণে শিক্ষার্থীরা বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। যার ফলশ্রুতিতে তারা আত্মহত্যার মতো অতি আবেগীয় সিদ্ধান্তগুলো নেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে মোট আত্মহত্যাকারী ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৯৮ জন, যা মোট সংখ্যার ১৯.১ শতাংশ।
এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ জন, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, মেডিকেল কলেজের ৬ জন, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৫ জন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, এবং অন্যান্য ১৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন করে শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ব্যাপকহারে আত্মহত্যার পেছনে যে কারণটি দায়ী সেটি হল প্রেমঘটিত কারণ যা ১৬.৫ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়েও ২২.৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
গেল বছরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা কম ছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করা এবং ধর্মীয় অনুশাসনভিত্তিক পরিবেশের মধ্যে থাকার কারণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা কম থাকবে বলেই আমরা আশা করি। কিন্তু ২০২৩ সালে ৫১৩ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৪৮ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ছিল ৩০ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৮ জন। ২০২২ সালে ৫৪ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিল।