আসিফের জন্য ইউনিভার্সিটি বানানোর ইচ্ছা আরাভের, দিতে চান চাকরিও
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন আলোচিত টপিক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব। সম্প্রতি তিনি সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের একটি অধ্যায় নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আলোচনায় আসেন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার মুখে ব্র্যাক থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এবার আলোচিত এ শিক্ষকের জন্য ইউনিভার্সিটি বানানোর আশা প্রকাশ করেছেন দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান। শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে নিজের প্রতিষ্ঠানে দিতে চান চাকরিও।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে শিক্ষক মাহতাবকে এ চাকরির অফার করেন আরাভ। লাইভে আসার আগে তিনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, আসসালামু আলাইকুম, আপনারা সবাই ঘরে ঘরে প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। আমি আছি আসিফ ভাইয়ের সাথে, আপনারা আছেন তো।
এরপর লাইভের শুরুতে আরাভ খান বলেন, আমি বাংলাদেশের কিছু প্রতিবন্ধী নিয়ে কথা বলতে চাই। আমি জানি না তাদের ভেতরে শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিনা। তবে এতটুকু বলতে পারি, ওদের ভেতর যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকত, আসিফ মাহতাব ভাইয়ের মতো একটা মানুষের চাকরি ওরা কেড়ে নিতো না।
আরাভ খান আরও বলেন, আপনারা ক্লাস সেভেনে পড়া একটা বাচ্চারে যদি শেখান সমকামিতা, পুরুষে-পুরুষে, নারীতে নারী কেমনে অবৈধ সম্পর্ক করা... যৌন সম্পর্ক কেমনে করতে হয়- এগুলো শেখান, তাহলে তারা কি শিখবে? ওটাই তো শিখবে যে আমাদের বইতেই তো ওটা শিখিয়েছে।
আরাভ খান বলেন, যেটা আপনারা জানতেন না, অনেক মুরুব্বি এখনো আছে, যারা জানে না সমকামিতা কি, তারা তো কখনও শোনেও নাই। কোন ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ গাজা খেলে এসব মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এগুলো অ্যাপ্রুভাল দেয়, এটা আমার জানা নাই। আসিফ ভাইয়ের চাকরি নিয়ে নিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানে যত বেতন দিতো, তার ডাবল বেতন দিয়ে আমি আসিফ ভাইকে চাকরি দেবো। তিনি সবাইকে বিজনেস করার পরামর্শও দেন।
এরপর তিনি ফেসবুকের পৃথক এক স্ট্যাটাসে জানান, আসিফ মাহাতাব ভাইকে আমি একটা ইউনিভার্সিটির তৈরি করতে স্পন্সর করতে চাই। যে ইউনিভার্সিটিতে আসিফ মাহতাব ভাইয়ের মতে মানুষ তৈরি হবে। পোস্টে তিনি আসিফ মাহতাবের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার অনুসারীদের কাছে তার ব্যক্তিগত নম্বর চেয়েছেন।
আসিফ মাহতাব ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীতে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এক আলোচনায় সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইয়ের ‘শরীফার গল্প’ নামের একটি অংশ ছিঁড়ে ফেলে তিনি আলোচনায় আসেন।
এদিকে, পাঠ্যবই ছেঁড়ায় শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে ক্লাস নেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে আর ক্লাস নিতে না যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক আসিফ জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তিনিও আর ক্লাসে ফিরছেন না।
আরও পড়ুন: নারী ও হিজড়াদের অধিকারের পক্ষেই সংগ্রাম করে যাচ্ছি: আসিফ মাহতাব
শিক্ষককে পাঠদান থেকে বিরত রাখায় প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। মঙ্গলবার সকালে তারা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা প্রধান গেটে এসে জমায়েত হয়। এ সময় তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নিজেদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এরপর মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কিছু উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি চাচ্ছে হিজড়াদের আমাদের থেকে আলাদা করে দিতে। কিন্তু হিজড়া আমাদের আলাদা কেউ না। তারা আমাদেরই ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন। তারা কেন গুরু মা বা অন্য কারো সাথে অন্য কোথাও যাবে? তারা থাকবে তাদের বাবা মার সাথে। তারা থাকবে আমাদের সমাজের মাঝে। তারা আমাদের সাথে স্কুলে যাবে, আমাদের সাথে রেস্টুরেন্টে যাবে। তারা থাকবে আমাদের মধ্যেই।