এবার একুশে গ্রন্থমেলা ২৯ দিনের, ৭০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন
প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত এ মেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে। ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন।
বাংলা একাডেমি থেকে জানা গেছে, এ বছর অধিবর্ষ হওয়ায় মেলা হবে ২৯ দিনের। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা করার অনুমতি পাওয়া গেছে। শর্ত অনুযায়ী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠ ব্যবহার করা যাবে। ১ মার্চ মাঠ হস্তান্তর করতে হবে। ইতিমধ্যে মেলার ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যেগে মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ মেলা পরিচালনা করেছে। পরে মেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সব কাঠামোসহ অন্যান্য অংশ সম্পন্ন করা হতো। তবে তাদের অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমিই সম্পন্ন করছে। এবারের মেলার কাজ আগের মেলা শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে।
পূর্বের আয়োজনের সঙ্গে মিল রেখে কাঠামো তৈরির কাজ গত ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আইন উপদেষ্টার পরামর্শের ভিত্তিতে নীতিমালা নতুন করে প্রণয়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর পরিচালনা কমিটি গঠন অনুষ্ঠান ও চারটি সভা সম্পন্ন, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি, পুলিশ বিভাগ, মেট্রোরেল, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে সভা, মেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, সংস্থায় পত্র প্রেরণ ও যোগাযোগ সম্পন্ন হয়েছে।
২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যেগে মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ মেলা পরিচালনা করেছে। পরে মেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সব কাঠামোসহ অন্যান্য অংশ সম্পন্ন করা হতো। তবে তাদের অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমিই সম্পন্ন করছে।
বাংলা একাডেমি অংশের স্টল তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবকাঠামো নির্মাণসহ প্যান্ডেলের কাজও প্রায় শেষ। মেলার প্রবেশ ও বাহির গেটের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন, মন্দির কমিটি ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী অংশে পুরো মেলার নিরাপত্তার স্বার্থে টিনের নিরাপত্তা বেষ্টনির কাজ প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। মেলায় সুষ্ঠুভাবে আলোকে বিন্যাসের জন্য ই-টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।
এবার নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে, বাংলা একাডেমি স্টল, বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়ন, তথ্যকেন্দ্র, মোড়ক উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চের ইন্টেরিয়র কাজ সম্পন্নের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে ওটিএম এবং আরএফকিউ পদ্ধতিতে। ফলে কিছু কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় ইতোমধ্যে মেলা সম্পর্কিত স্টল বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল বরাদ্দের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাপ্ত আবেদনের ভিত্তিতে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশ ক'টি নতুন প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, বিগত বছর এবং নতুন প্রাপ্ত প্রকাশকদের মধ্যে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে স্টল রবাদ্দের লটারি আগামী ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমি অংশের রবীন্দ্র চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে মেলা উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি প্রদান করেছেন। মঞ্চ ও প্যান্ডেলের অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বই মেলার সার্বিক দায়িত্বে থাকা বাংলা একাডেমির প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক কে এম মুজাহিদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বাংলা একাডেমি এবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ বই মেলা আয়োজন করছে। কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থাকবে না। কারণ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কারণে বাংলা একাডেমির নীতি নির্ধারকদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
এখানে বাংলা একাডেমির কোনো ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বই মেলা থেকে আয়ের প্রতিটি টাকার হিসাব কড়ায় গন্ডায় সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আয় হবে কিন্তু সেখানে বাংলা একাডেমির ব্যবসায়ীক কোনো পরিকল্পনা নেই। আয়োজনটাকে আরও বেশি গোছালো করতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। প্রতিটি টাকার যাতে সুষ্ঠু ব্যয় হয়, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: আগামী ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি নির্বাচন
মেলার বিন্যাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলার বিন্যাস ও কাঠামো আগের মতোই থাকবে। গতবার যে বিন্যাসটি ছিলো সেটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। লাইন আকারে দোকানগুলো থাকবে। তবে মেলা যাতে শুধু টিএসসির গেট কেন্দ্রিক না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে দোকানগুলো বসানো হবে। গেটে নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে। খাবারের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
নতুন দোকান আসবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অল্প কিছু নতুন দোকানের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। আবেদন করেছে ৭৭টি। সেখান থেকে বাছাই করে কয়েকটি নতুন দোকান রাখা হবে। তবে সংখ্যাটি এখনও বলা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, এ বছর যেহেতু অধিবর্ষ, তাই ২৯ তারিখে মেলা শেষ হবে। ১ তারিখে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে মাঠ বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে সামনের বছর থেকে এখানে মেলা করা যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মাঠ বরাদ্দ দেবে কি না সে ব্যাপারে সংশয় আছে। বাংলা একাডেমির বক্তব্য হচ্ছে, বাংলা একাডেমি যদি এ মেলা না করতে পারে বা বাংলা একাডেমিতে যদি না হয়ে অন্য জায়গায় যায়, তাহলে মেলার স্বকীয়তা থাকবে না।