সন্তানকে বুকে নিয়েই জীবন্ত পুড়ে মারা যান নাদিরা
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেন রাত ১১ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত ১২ টার দিকে নেত্রকোনা স্টেশন থেকে নাদিরা আক্তার পপি তার দুই ছেলে, ভাইসহ পরিবারের ৯জন ট্রেনে উঠেন। ঢাকার বিমান বন্দর স্টেশনে পরিবারের ৫ সদস্য নেমে যায়। ভাই ও দুই সন্তানসহ কমলাপুর স্টেশনে নামার কথা ছিল পপির। কিন্তু বিমান বন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর বগিতে আগুন লাগে। বড় ছেলেকে নিয়ে পপির ভাই নামতে পারলেও ছোট ছেলেকে কোলে নিয়েই বগির মধ্যে আগুনে পুড়ে মার যান তিনি।
নিহত পপির ভাই হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ‘তাদের বাড়ি নেত্রকোণার সদর উপজেলার বরুনা গ্রামে। ঢাকার তেজগাঁও তেজতুরী বাজার এলাকায় থাকেন। পপির স্বামী মিজানুর কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করেন। গত ৩ ডিসেম্বর তারা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই গত রাত ১২টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস করে রওনা দিয়েছিলেন ঢাকায় ফিরতে। ভোরে তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। সঙ্গে ছিলেন তার বোন নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার দুই ছেলে ইয়াসিন (৩) ও ফাহিম (৮)।’
হাবিবুর আরও জানান, ‘তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেনের পেছনের সিট থেকে আগুন জ্বলে উঠে। মুহূর্তেই আগুন পুরো বগিতে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে দৌড়ে তিনি ফাহিমকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামতে পারলেও ভেতরে আটকা পড়েন ইয়াসিন ও তার মা পপি। তাদের আর কোনোভাবেই বের করতে পারেননি। পরে ফায়ার সার্ভিস তাদের মরদেহ বের করে।’
পপির দেবর মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘ভাবির কোলে ছিল ছোট্ট ইয়াসিন। বাচ্চা নিয়ে উনি আর নামতে পারেননি। আগুন নেভানোর পর ওনার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখনও তাঁর কোলে ছিল সন্তানের মৃতদেহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাশ দেখে বোঝা যায়, শেষমুহূর্ত পর্যন্ত সন্তানকে বুকে আগলে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ভাবি। তবে অনেক লোকের হুড়োহুড়ির মধ্যে পারেননি। সন্তানকে বুকে নিয়েই জীবন্ত পুড়ে মারা যান তিনি।’