৫ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ হাজার ১৬৫ জন
চলতি বছরের ৫ মাসে সড়কে ১৮ হাজার ৭৫৬ টি দুর্ঘটনায় ২০ হাজার ৫৯৫ আহত ও নিহত হয়েছেন ২ হাজার ১৬৫ জন। সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা প্রেরিত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ছোট-বড় ৫ হাজার ২৫৯ টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ২২৮ জন, নিহত হয়েছেন ৪০২ জন। ছোট-বড় ৪ হাজার ৮০ টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত ৪ হাজার ৫২৮ জন আহত এবং নিহত হয়েছেন ৪১১ জন।
নির্ধারিত গতিসীমা না মেনে, বিশ্রাম না নিয়ে টানা ১২ থেকে ২০ ঘন্টা বাহন চালনাসহ বিভিন্ন নিয়ম না মানায় ছোট-বড় ৪ হাজার ৮০ টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত ৪ হাজার ৫২৮ এবং নিহত হয়েছেন ৪১১ জন। ৪ হাজার ৮৬০ টি বাস দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৩৭৯ জন আহত এবং ৭৫০ জন নিহত হয়েছেন। দায়িত্বে অবহেলা, স্থানিয় পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতিসহ বিভিন্নভাবে সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ বাহন নাসিমন-করিমন এবং অন্যান্য ৩ চাকার বিভিন্ন ধরণের বাহনে ছোট-বড় ৪ হাজার ৮১৬ টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৪২৩ এবং নিহত হয়েছেন ৫৯১ জন।
প্রতিবেদনটি ২২ টি জাতীয় দৈনিক, ১৮ টিভি-চ্যানেল, ২২ টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানিয় প্রত্যক্ষদর্শী-সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবিগণের দেয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদন দুর্ঘটনামুক্ত পথ-এর জন্য তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে সড়কপথে দুর্ঘটনা না কমার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন সেক্টরে কেবলমাত্র প্রশাসনিক অদক্ষতাই নয়; দায়ী দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। পাশাপাশি যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন সেই সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া একশ্রেণির চাঁদবাজ সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থার কারণে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব ও অটোরিক্সার এই মহাসংকট ও স্বল্পতা।
সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথচলা আমাদের জনগনের অধিকার। সেই অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগনের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে।
সেভ দ্যা রোড ৭ দফা দাবি ঘোষণা করে। আর সেই ৭ দফা হলো- ১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগি নিয়োগ ও হেলপারদ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ সরকারীভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতু সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।