সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ে বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রীর সম্মানি ভাতা দিগুণের বেশি
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের চেয়ে বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রায় দিগুণের বেশি বার্ষিক সম্মানী ভাতা পান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া হেভিওয়েট এ দুই প্রার্থীর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আয় গত পাঁচ বছরে বেড়েছে তিন গুণের বেশি। তিনি যে হলফনামা দিয়েছেন তাতে বর্তমান বার্ষিক আয় ৫০ লাখ ৩০ হাজার ১১৩ টাকা দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৭২০ টাকা কৃষিখাত থেকে, ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বাসা ভাড়া থেকে, ৩০ লাখ টাকা শেয়ার থেকে, ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা চাকরি সম্মানী ভাতা এবং বাকি টাকা অন্যান্য খাত থেকে এসেছে। বর্তমানে তার ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় নেই।
২০১৮ সালে নাহিদের নিজের নামে ১ কোটি ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ০৯ টাকার সম্পত্তি ছিল। যার মধ্যে নগদ ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭০৫ টাকা, ব্যাংকে জমা ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৩ টাকা ও সঞ্চয়পত্রে ২০ লাখ টাকা ছিল। এছাড়া বাকি টাকা গাড়ি ও অন্যান্য খাতের।
তখন নাহিদের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ছিল মোট ৫৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা যার মধ্যে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩০ টাকা ব্যাংকে, ৫০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে ও বাকি টাকা বিভিন্নখাতে। বর্তমানে নুরুল ইসলাম নাহিদের নিজের নামে ২ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার ১৩২ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে যার মধ্যে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩১ টাকা ব্যাংকে জমা এবং বাদবাকি গাড়ির মূল্য ও অন্যান্য। তবে এবার তিনি তার স্ত্রীর কোন অস্থাবর সম্পদ প্রদর্শন করেননি।
অন্যদিকে বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বার্ষিক আয় ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ৭২৮ টাকা। এছাড়া বিগত পাঁচ বছরে কোটি টাকার বাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। বেড়েছে স্থায়ী আমানতও। একই সঙ্গে ঋণ বেড়ে হয়েছে ১০ গুণ।
আরও পড়ুন: ৫ বছরে বার্ষিক আয় বেড়েছে ২৮ লাখ, কোটি টাকার বাড়ি শিক্ষা উপমন্ত্রীর
ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নওফেল কৃষি খাত থেকে ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা ও পেশা সম্মানী হিসাবে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৮ টাকা আয় করেন। এ ছাড়া চাকরি থেকে বছরে ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাতে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৭০ টাকা আয় তার।
গত সংসদ নির্বাচনের সময় বছরে তার আয় ছিল ৫০ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ টাকা। ওই সময় নওফেল ও তাঁর স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। এবার তাদের ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা স্থাবর সম্পত্তি হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে নওফেলের নামে ৪ লাখ টাকার কৃষিজমি, ১ কোটি টাকার দালানকোঠা এবং স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার দালান থাকার কথা বলা হয়েছে।
হলফনামায় দেখা যায়, পাঁচ বছরে উপমন্ত্রীর ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ১০ গুণ। ২০১৮ সালে ব্যাংক ঋণ ছিল ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৫ টাকার। বর্তমানে ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭২ টাকা।
শিক্ষা উপমন্ত্রীর নিজের নামে বর্তমানে নগদ আছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৯৪ টাকা, যা গতবারের হলফনামায় ছিল ৩০ লাখ টাকা। গতবার তিনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের ঘরে ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮২ টাকা দেখালেও এবারের হলফনামায় সেখানে কিছুই উল্লেখ করেননি।
বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকার। তার পোস্টাল সেভিংস রয়েছে ৬ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার ৪১২ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে বর্তমানে তার ঋণ ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৩২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে নওফেলের ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।