নির্বাচনে ভোটার নিরুৎসাহ কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে বিএনপি
বিএনপিবিহীন নির্বাচনের পথে হাটছে সরকার। অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে সাধারণ জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি। সে হিসেব মাথায় রেখে জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহ করতে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে নানা রকম ‘প্রচারণাভিত্তিক’ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা ভাবছে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলো। পাশাপাশি যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিও দেওয়া হতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন সমমনা দল ও জোট এবং নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা এক যৌথ সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে। রাজধানীর তোপখানা রোডের শিশুকল্যাণ পরিষদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে বলে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়।
সভায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক ও মিত্র দলগুলোকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানোর বিষয়ে মতামত দেন কয়েকজন নেতা। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গতকাল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে হরতাল পালন শেষে আগামী রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি ও তাদের সমমনারা। এরপর কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেননি দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে অবরোধের বিরতিতে আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপি।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে নিয়ে বৈঠক করলাম। একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমরা যে ঐক্যবদ্ধ, তা আজকের বৈঠকে প্রমাণ হলো। তা ছাড়া আরো যারা নির্বাচন বর্জন করেছে, এমন দলগুলোকেও যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিএনপি ও সমমনা দলের নেতাদের অনেকে আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। কারো যুক্তি, আগামী কিছুদিন হরতাল-অবরোধের বাইরে থেকে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ কিংবা পদযাত্রার কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করতে হবে।
যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর কয়েকটি ঢাকায় নারী, যুব, শ্রমিক ও আইনজীবী সমাবেশ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির কারাবন্দি, গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের নিয়ে ঢাকা ছাড়াও সারা দেশের জেলা শহরে পর্যায়ক্রমে মানববন্ধনের আয়োজন করা হতে পারে। সেখান থেকে জেলা ও দায়রা জজ বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন কী করবে, এ নিয়ে আজকালের মধ্যে দলের নীতিনির্ধারকরা বৈঠক করবেন। বৈঠকেই এসব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ৩৯ দলের যৌথ বিবৃতি
আগামী সাত জানুয়ারি দ্বাদশ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান এবং তফসিল বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপিসহ ৩৯টি রাজনৈতিক দল। গতকাল বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডের শিশুকল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এক যৌথ সভায় এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হয়।
নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিব আনোয়ারের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এই নির্বাচনের তফসিলকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা অবিলম্বে ৭ জানুয়ারি ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা পরিষ্কার করে উল্লেখ করতে চাই যে সরকার যদি জেদ, অহমিকা নিয়ে জবরদস্তি করে নির্বাচনের নামে আরেকটি তামাশা মঞ্চস্থ করতে চায়, তাহলে সরকারের এই অশুভ তৎপরতা প্রতিরোধ করা ছাড়া দেশবাসীর সামনে অন্য কোনো পথ থাকবে না।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা সরকার ও সরকারি দলের সব ধরনের উসকানি, সহিংসতা ও পরিকল্পিত নাশকতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে চলমান গণ-আন্দোলন-গণসংগ্রামকে বিজয়ের পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। এই আন্দোলনে সব বিরোধী রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশা ও সামাজিক সংগঠনকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানাই।’
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, গণ-অধিকার পরিষদের (নুর) সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ।