ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত শিক্ষককে চিকিৎসা
কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত যশোরের কলেজ শিক্ষক আমিনুর রহমান মধুকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের এমন আচরণে মর্মাহত পরিবার ও স্বজনরা। এমনটি সমীচীন নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আইনজীবীরা।
ভুক্তভোগী আমিনুর রহমান মধু সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া তিনি যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর রাতে যশোর-নড়াইল মহাসড়কে দুটি বাস থেকে ককটেল, লাঠি ও পেট্রল জব্দের ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৮৭ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় আসামি যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধু। এরপর হরতাল–অবরোধে নাশকতার আরও দুই মামলার আসামি হন তিনি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে যান। কিন্তু ২ নভেম্বর সদর উপজেলার আমদাবাদ গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তাঁর দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
আরও পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ২ ফেব্রুয়ারি!
পরদিন ১৩ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁকে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাঁকে। আবার ওই হাতে একগুচ্ছ দড়ি প্যাঁচানো। ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া এমনভাবে লাগানো যাতে সামান্য নড়েচড়ে বসারও কোনো সুযোগ নেই কেবল দুই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পুলিশের আপত্তির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিছানা পর্যন্ত দেয়নি। যে কারণে আমিনুর রহমান মধুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করা হয়। তাঁর বাম হাতে ক্যানোলা লাগানো। সেখানে স্বজনদের তাঁর সান্নিধ্যে যেতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি সময়মতো ওষুধ সেবন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তাঁর স্বজনেরা।
আমিনুর রহমান মধুর স্ত্রী নাহিদা সুলতানা লাবনী বলেন, পরিবারের অভিভাবক গুরুতর অসুস্থ হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি আমার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তার ওপর কত অমানবিকভাবে দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইবাদত আলী খান বলেন, বাংলাদেশে আইন কাগজ কলমে আছে, বাস্তবে নেই। আমিনুর রহমান মধু যে রোগে অসুস্থ তাতে যে কোন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তার ওপর একজন শিক্ষককে এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে রাখা দেশ ও জাতির জন্যে খুবই লজ্জাজনক। তার স্ত্রী- সন্তান অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই আমি আশা করবো আদালত তাকে জামিন দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ করে দেবেন।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, বিষয়টা খুবই আমনবিক। একজন হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে এভাবে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া মোটেও সমীচীন নয়। আইন আদালত- মানুষের কল্যাণের জন্যে, অকল্যাণের জন্যে নয়।