প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে মনোনয়ন না দিতে ১৬ নেতার চিঠি
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা) সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি লিখিত আবেদন করেছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৬ নেতা।
বুধবার (২২ নভেম্বর) আবেদনপত্রটি দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগপত্রের একটি অনুলিপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত, মাদকাসক্ত, ভূমিদস্যুসহ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ আনেন তারা। তাকে মনোনয়ন না দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সই রয়েছে লিখিত আবেদনে। যারা সই করেছেন তারা সবাই দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।
অভিযোগের তালিকায় ৩ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি (জাকির হোসেন) নিজে একজন মাদকসেবী এবং তার পরিবার দিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চোরাকারবারি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।’ তাতে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার স্বাক্ষর রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দাবি করে অভিযোগের ৫নং ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় জাকির হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার অনেক চাকরিপ্রার্থীর কাছে টাকা নিয়ে চাকরি দেননি। এতে হাজার হাজার পরিবার পথে বসেছে। এসব কারণে ওই আসনের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ জাকির হোসেনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে দলীয় নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে বিব্রত হচ্ছেন।’
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পার্লামেন্টারি বোর্ড ও দলীয় সভাপতির প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নৌকা মার্কায় জাকির হোসেন ব্যতীত আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসনটি দলীয় সভাপতিকে উপহার দেবেন।
এই পত্র স্বাক্ষর করেছেন- রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিউল আলম, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপকমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমসহ ১৬ নেতাকর্মী।
রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘অভিযোগগুলো সত্য এবং আমরা সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর করে তা দলীয় প্রধান বরাবর পাঠিয়েছি।’ রাজিবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ‘জাকির সাহেবের বিরুদ্ধে বঙ্গমাতার নামে জমি দখলসহ উল্লেখ করা সব অভিযোগ সত্য। সত্য না হলে আমরা স্বাক্ষর করতাম না।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাকিব আল হাসান, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একান্ত বৈঠক
রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, ‘জাকিরের বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি অভিযোগ সত্য। এই আসনের মানুষ তার ওপর এতটাই অতিষ্ঠ যে তাকে মনোনয়ন দিলে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।’
অভিযোগকারী হিসেবে নাম থাকলেও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা সেখানে স্বাক্ষর করেননি বলে জানিয়েছেন। তবে তারা উল্লেখিত অভিযোগের সঙ্গে একমত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবির বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম লিচু বলেন, ‘অভিযোগপত্রটি আমি দেখেছি। সেখানে দেওয়া স্বাক্ষরটি আমার নয়। তবে সেখানে উল্লেখ করা সব অভিযোগ সত্য। আমি এগুলোর সঙ্গে একাত্মতা জানাই।’
এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের মুঠোফোনে অসংখ্যবার কল করলেও ফোনটি নম্বরটি বন্ধ দেখায়। ফলে তার মন্তব্য জানা যায়নি হয়নি।