২৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:০১

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে দাবি করে বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি

  © সংগৃহীত

আগামী নির্বাচনকে বানচালের জন্য ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল দাবি করে তার বিরুদ্ধে ৩৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও শিক্ষক বিবৃতি প্রদান করেছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার, ঢাবির সাবেক উপাচার্য  ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৫ নভেম্বর ২০২৩ বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর জনসাধারণের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষিত তফসিল অনুসরণ করে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুযায়ী প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে। আগ্রহী প্রার্থীরাও মনোনয়পত্র জমাদানের মাধ্যমে চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত অনেক দল নির্বাচনে আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

সার্বিকভাবে দেশ যখন নির্বাচনমুখী অবস্থায় চলে গেছে এমন সময়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির দোসর এবং দেশকে বিরাজনীতিকরণের তৃতীয় ধারা আবার নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। তারা নির্বাচন বানচালের নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিভিন্ন অপকৌশল এবং একটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে তেমন সাফল্য না পেয়ে এবার তারা সাবেক আমলা এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিরাজনীতিকীকরণের কৌশল হিসেবে এবার তারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য মায়াকান্না শুরু করেছে। ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি'র কথা বলে সংবিধানের বাইরে গিয়ে 'সংকট' সমাধানের যে কথা তারা বলছেন, তা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা মনে করি। এরা সংবিধানকে পদদলিত করে গণতন্ত্র হত্যার মাধ্যমে 'ওয়ান ইলেভেনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।

কার্যত, বিবৃতিতে সংবিধান লংঘন করে সেটিকে 'মার্জনা' দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা শুধু অগণতান্ত্রিকই নয়- রাষ্ট্রদ্রোহিতারও শামিল। এ ধরনের অপচেষ্টা তারা অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালেও করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর তথাকথিত 'মার্জনা' প্রদান করার মাধ্যমে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং সংবিধান লংঘনের মত ঘটনাগুলোকে যারা বৈধতা দিয়ে দেশকে খুনীদের অভয়রণ্যে পরিণত করেছিল, তাদেরই মিত্ররা বিভিন্ন সময়ে ঘোলাজলে মাছ শিকারে আবির্ভূত হয়। আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করাই তাদের আসল উদ্দেশ্য।

আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা ফিরিয়ে আনা আর কোনোভাবে সম্ভবপর নয়। পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশেও সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ নির্বাচন। আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির পথ পরিহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক ধারায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।

এছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানি অপশক্তির উত্তরপুরুষ, অসাংবিধানিক ধারার পৃষ্ঠপোষক, খুনীচক্রের প্রেতাত্মাদের নতুন কৌশলে পুরাতন ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টাকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। একই সাথে দেশের বিবেকবান মানুষকে সংবিধান, রাষ্ট্র ও উন্নয়ন-বিরোধী যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি