বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে ৯০ শতাংশ দেশ প্রশংসা করেছে: আইনমন্ত্রী
‘এবারের রিভিউতে ১১১ টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে’ বলে দাবি করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে গঠনমূলক সুপারিশও করেছেন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে তারা।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সোমবার (১৩ নভেম্বর) জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) শেষে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। তার নেতৃত্বে পর্যালোচনায় বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
লিখিত বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘জেনেভায় ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) ওয়ার্কিং গ্রুপের ৪৪তম সেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ জেনেভা সময় সকাল ১০টায় বাংলাদেশের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের চতুর্থ ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ। এর আগে ২০০৯, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী রিভিউ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত আগস্ট মাসে ইউপিআর উপলক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিবেদন জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রেরণ করেছিল।
রিভিউকালে আমার বক্তব্যে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে মানবাধিকার সুরক্ষা এবং প্রসারে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের জনকল্যাণমূলক নীতির উল্লেখযোগ্য দিক আমি উপস্থাপন করি। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের প্রচেষ্টা তুলে স্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরেছি। গত রিভিউয়ের পর থেকে বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্পর্কিত বেশকিছু আইনপ্রণয়ন
করেছে বলে সভায় অবহিত করেছি। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের রিভিউ উপলক্ষে আগাম প্রশ্ন প্রেরণ করেছিল। এসব প্রশ্নের মধ্যে ছিল শ্রমিক অধিকার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, মানবাধিকার সম্পর্কিত কিছু ইন্সট্রুমেন্টে আমাদের সম্ভাব্য র্যাটিফিকেশন, মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিভিন্ন স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার/মেকানিজমের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার, বৃদ্ধ ব্যক্তির অধিকার রক্ষায় সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কিত। আমি যথাযথভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছি। বিভিন্ন বিভিন্ন প্রতিকূলতা স্বত্বেও সুশাসন, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কাজ করে যাবে বলে আমি কাউন্সিলকে অবহিত করেছি। দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনের লক্ষে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে যেখানে প্রত্যেক নাগরিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।
আনিসুল হক বলেন, ‘এবারের রিভিউতে ১১১ টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। প্রায় ৯০ শতাংশ মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। সভায় নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, খাদ্য নিরাপত্তা, সকলের জন্য আবাসন, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা বহুল প্রশংসিত হয়েছে। ১ দশমিক ১ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো।
আইনমন্ত্রী বলেন, সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের গাড়ি মানবাধিকার বিষয়ক কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারকরণ, জাতীয় দলে ছ পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখা, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রচেষ্টা জোরদারকরণ, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ, অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ রোধে জোরদার প্রচেষ্টা গ্রহণ, মানব পাচার বন্ধকরণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা সম্পর্কিত সুপারিশ। আমরা সুপারিশসমূহের ওপর বিভিন্ন জাতীয় স্টেকহল্ডারদের সঙ্গে যথাযথ পরামর্শ করব এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার অবস্থান মানবাধিকার পরিষদকে জানাব।