৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৩৪

১ ঘণ্টার সিভিল সার্জন হলেন ভোলা সরকারি কলেজের হুমায়রা

হুমায়রা তানহা ও ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান  © টিডিসি ফটো

আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে ভোলায় এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নেয় ভোলা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হুমায়রা তানহা। সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ভোলার সিভিল সার্জেন হিসাবে তিনি এই প্রতীকী দায়িত্ব পালন করেন।

এসময় ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান প্রতীকী দায়িত্ব হিসাবে এ সম্পর্কে ধারণা দেন। এসময় হুমায়রা তানহা কে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের পাশের চেয়ারে বসতে দেন সিভিল সার্জন। দায়িত্ব পেয়ে অনুপ্রাণিত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তানহা। ভবিষ্যতের লক্ষ্যও তুলে ধরেন তিনি।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর ‘গার্লস টেকওভার’ কর্মসূচির আওতায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) সহযোগিতায় ইয়েস বাংলাদেশ ও ইয়ুথ ফর চেঞ্জ-এর আয়োজনে ‘গার্লস টেকওভার’ শীর্ষক কর্মসূচিতে কন্যা শিশু যুব নারীকে নেতৃত্ব উদ্বুদ্ধকরণ মেয়েদের আত্মবিশ্বাস তৈরির সুযোগ বৃদ্ধির কর্মসূচীর আওতায় এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালন করা হয়।

প্রতীকী সিভিল সার্জন এর দায়িত্ব নিয়ে হুমায়ারা তানহা বলেন, আজ ভোলার সিভিল সার্জন এর প্রতীকী দায়িত্ব পালন করতে পেরে অসাধারণ লাগছে। আজকের এই দিনটির জন্য আমি অনেক অপেক্ষায় ছিলাম। আজ যখন আমি এই আসনটিতে বসেছি তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি আমি এবং আমার মতো কিশোর কিশোরীরা এমন পর্যায় পৌছাতে পারবে। আমি স্বপ্ন দেখছি যে আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ভবিষ্যতে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ পাবে নিজেদের স্বপ্ন গুলো পূরণ করার জন্য যেমন আজকে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়েছি এক ঘণ্টা সিভিল সার্জন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে।

এ সময় তিনি ভোলার স্বাস্থ্য সেবা মানোন্নয়নের জন্য একাধিক সুপারিশ করেন, যার মধ্যে অন্যতম ভোলায় একটি শিশু হাসপাতাল তৈরি, পাশাপাশি ভোলার ২২ লাখ জনসংখ্যা জন্য একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার পাশাপাশি জেলার হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার, নার্স সহ জনবল বৃদ্ধির  সুপারিশ করেন তিনি।

এছাড়াও তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ কিশোর-কিশোরী। এই মোট কিশোর-কিশোরীর ৪৮ শতাংশ কিশোরী এবং ৫৩ শতাংশ কিশোর। কিন্তু এই কিশোর কিশোরীদের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে সেবা নেওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থার সেবার মান বৃদ্ধি করার কথা বলেন।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. কেএম শফিকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের সরকার প্রধান নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন ডা. নারী, সিভিল সার্জন নারী, নার্স নারী। সে ক্ষেত্রে প্রান্তিক গ্রামে বা দ্বীপ অঞ্চলের নারী ও কিশোরীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কলেজ শিক্ষার্থী হুমায়ারা তানহা ওই কিশোরীদের আইকন হিসেবে পরিচিতি পাবে। তাকে দেখেই শিশু ও কিশোরী মুক্তমনা হিসেবে বেড়ে উঠবে। এবং দেশের সর্বোচ্চ পদগুলো অর্জনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়া সাহস যোগাবে। নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরও বলেন, তানহা আজ যেই সুপারিশ করেছে তা ভোলার স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভোলা সিভিল সার্জন অফিস মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ ফাহমিদ খান,ভোলা সদর হাসপাতাল সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমা বেগম, ন্যাশনাল চিলড্রেন’স্ টাস্কফোর্স (এনসিটিএফ) এর ভলেন্টিয়ার রিমা আক্তার শিমু, মোঃ শাফায়েত হোসেন সিয়াম সহ  হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স,সাংবাদিক ও এনসিটিএফ বাংলাদেশ এর ভোলা জেলা কমিটির সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

হুমায়রা তানহা ভোলা সরকারি দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ভোলা পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ড কালি বাড়ি রোড এলাকার মো: হুমায়ুন কবির এর কন্যা। তানহা  ন্যাশনাল চিলড্রেনস টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) ভোলা জেলা কমিটির সহ সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিশু কিশোরদের প্রতীকী দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তাদের নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি হবে বলে মনে করেন জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ।