আলোচনায় নতুন কারিকুলাম

‘ভুয়া’ অভিভাবকদের মাঠে নামিয়েছে কোচিং ব্যবসায়ীরা

শিক্ষামন্ত্রীর সভায় বললেন স্কুল প্রধানরা

গত ১৯ অক্টোবর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে
গত ১৯ অক্টোবর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে  © ফাইল ছবি

দেশের স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির অনলাইনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নতুন কারিকুলাম নিয়ে সম্প্রতি অভিভাবকদের একটি পক্ষের মানববন্ধনের বিষয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় স্কুল প্রধানরা নতুন কারিকুলামে পাঠদানের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তারা মন্ত্রীকে বলেছেন, কোচিং ব্যবসায়ীরা এসব অভিভাবকদের মাঠে নামিয়েছেন।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ‘নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ বৈঠক হয়। এতে ঢাকা অঞ্চলের ১১ জেলার ৪৫৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অংশ নেন। পর্যায়ক্রমে সব অঞ্চলের শিক্ষকদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করবেন শিক্ষামন্ত্রী। 

সভা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা অঞ্চলের ৪৫৯ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সভায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অসুবিধা-পরামর্শ, নানা অপপ্রচার, প্রতি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা, মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর শিক্ষাক্রম সংশোধন ও পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে স্কুলে স্কুলে মানববন্ধন করছেন অভিভাবকরা। শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের ব্যানারে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্কুলের সামনে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

শিক্ষামন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে ঢাকার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন: নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা বন্ধ নয়, পরিবর্তন আসছে পদ্ধতিতে

তারা শিক্ষামন্ত্রীকে বলেন, মানববন্ধন বা সমাবেশে যারা আসছেন, তাদের অনেকে কোচিং ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। বয়সে তরুণ প্রাইভেট-কোচিং চালানো অনেক শিক্ষার্থীকেও মানববন্ধনে দেখা গেছে। তাদের উস্কানিতে কিছু অভিভাবক না বুঝে আন্দোলনে আসছেন। মূলত কোচিং ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িতরা তাদের প্ররোচিত করেছেন। যারা আসছেন অধিকাংশই প্রকৃত অভিভাবক নন।

গত ১৯ অক্টোবর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সামনেও এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মন্ত্রীর সভায় কলেজ অধ্যক্ষ তার বক্তব্যে বলেন, তার কলেজের সামনে যারা মানববন্ধন করেছিলেন তাদের কেউই প্রকৃত অভিভাবক নন। কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন যেসব অভিভাবক নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছেন তাদের অনেকেই বাইরের লোকজন ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিকভাবেও প্রভাবিত হচ্ছেন।

তবে শিক্ষকদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা। আন্দোলনরত অভিভাবক ফোরামের সদস্য মারজান আক্তার বলেন, যারা কর্মসূচিতে আসছেন, তারা প্রত্যেকে অভিভাবক। তাদের সন্তানরা কোথায় পড়েন, কোন ক্লাসে পড়েন সেটাও জানাচ্ছেন। ভুয়া অভিভাবক বলে এখানে কেউ নেই। গাইড বা কোচিংয়ে যুক্ত কেউ এখানে উসকানি দিচ্ছেন না। আমরা চাই, এ কারিকুলামটা সংশোধন করে পরীক্ষা বহাল করা হোক।

মন্ত্রীর ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি বলেন, গত ২৩ অক্টোবর রাতে একটা সভা হয়েছে। আগামীতে আরও অনেকগুলো এমন বৈঠক করা হবে। শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার রুখতে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকরাও তাদের মতামত জানিয়েছেন। আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো আমরা বিবেচনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবো।


সর্বশেষ সংবাদ