ক্ষমা চাইলেন খালিদ ফারহান, এনায়েত ও সাদমান
চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার খালিদ ফারহান। তার সঙ্গে একই ঘটনায় গেল কয়েকদিন থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে আছেন তার আরও দুই সহযোগী কনটেন্ট নির্মাতা ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. এনায়েত চৌধুরী এবং আরেক পরিচিত মুখ কনটেন্ট নির্মাতা সাদমান সাদিক। গেল সপ্তাহের ওই পডকাস্ট নিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে তিনজনই ক্ষমা চেয়েছেন।
ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার খালিদ ফারহান, কনটেন্ট নির্মাতা ও শিক্ষক মো. এনায়েত চৌধুরী এবং আরেক কনটেন্ট নির্মাতা সাদমান সাদিক তিনজনে ‘দ্যা ট্রাইনোমিয়াল পডকাস্ট’ নামে সামাজিকমাধ্যমে একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সেখানে তারা বিভিন্ন সাম্প্রতিক এবং আলোচিত বিষয় নিয়ে গল্প করেন। দীর্ঘদিন থেকে তারা এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন।
সবশেষ গেল সপ্তাহে করা চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে ওই অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন খালিদ ফারহান। যে মন্তব্যে সায় দেন ওই অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা মো. এনায়েত চৌধুরী ও সাদমান সাদিক। পরে ওই মন্তব্যসহ কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে পড়ে। এরপর থেকে তাদের নিয়ে শুরু হয় বিতর্কের ঝড়।
আসলে সেদিন মানুষ ভেবেছিল, আমি নিজে থেকে বলছি হামাস একটি টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন। আসলে কিন্তু তা নয়। এটি একটি সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য, যেটা আমার কথা নয়। -খালিদ ফারহান
সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ তোফায়েল তাদের ওই ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, সম্প্রতি একটা পডকাস্টে খালিদ ফারহান ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইরত দল হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলেছেন। যেটা পশ্চিমা দেশগুলোর ভাষ্য। এর বাইরে ইসরায়েল নিয়ে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা বাংলাদেশের ফরেন পলেসির সাথে সাংঘর্ষিক। আসুন একটা পরিবর্তন করি। এদেরকে বয়কট করি।
তবে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়ে নিজেদের মতো করে ভেতরে ভেতরে বিষয়টি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও এতোদিন সরাসরি কেউই সামনে আসেননি। সবশেষ বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাতে নতুন একটি শো প্রচার করেন তারা তিনজনেই। সেখানে তারা তিনজনেই পৃথক পৃথকভাবে ক্ষমা চেয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
খালিদ ফারহান নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেন, আমার জন্য এনায়েত চৌধুরী ও সাদমান সাদিককে অনেক গালি খেতে হয়েছে। যেটা তারা ডিজার্ভ করেন না। সেদিন মানুষ ভেবেছিল, আমি নিজে থেকে বলছি হামাস একটি টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন। আসলে কিন্তু তা নয়। এটি একটি সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য, যেটা আমার কথা নয়।
তিনি বলেন, আমরা যখন দেখলাম মানুষ বিষয়টি নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন, তখন আমরা ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিতর্কিত ওই পডকাস্ট ডিলিট করে দিই। তবে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই জিনিসটি ভাইরাল হয়ে যায়। ঠিক তারপর দিনেই আমি আমার ফেসবুক, ইউটিউব কমিউনিটি, ডিস্কোয়ার্ডে অনেক বড় একটি পোস্ট লিখি যে, আমি ইসরায়েলের বিপক্ষে। এটি নিয়ে একটি এপোলজি পোস্ট লিখি। যেটা মানুষ খুব ভালোভাবে গ্রহণও করেছিলেন।
‘‘মানুষের মধ্যে থেকে আরও একটি কমপ্লেইন যেটা এসেছিল আমরা আমাদের পডকাস্টে খুব হাসিখুশি বা মজায় কথা বলেছি। যেটা যুদ্ধের মুহূর্তে আমাদের ঠিক হয়নি। আসলে আমরা পডকাস্টে বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রোভার্শিয়াল টপিক নিয়ে কথাবার্তা বলি। এর আগে লিবিয়া নিয়েও কথা হয়েছে।’’
গেল সপ্তাহে করা চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে পডকাস্টের এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন খালিদ ফারহান। যে মন্তব্যে সায় দেন ওই অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা মো. এনায়েত চৌধুরী ও সাদমান সাদিক।
পূর্বের ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে খালিদ ফারহান আরও বলেন, সর্বশেষ এ ঘটনার আগে আমি কখনো এপোলোজি পোস্ট লিখিনি। কারণ আমি প্রয়োজন বোধ করিনি। আমি যেটা বলি সেটার বিপক্ষে কেউ বললে তখন রাগ হয়। তবে এবারের বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা সবাই আপনাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
সর্বশেষ গতকালের পডকাস্টে এনায়েত চৌধুরী বলেন, আমি আসলে এই পডকাস্ট ডিলিট করার বিপক্ষে ছিলাম না। কারণ আগের পডকাস্ট থাকলে হয়তো মানুষ অনেক কিছু ক্লিয়ার হতে পারতো। আমি এই প্রথমবার মতো দেখলাম এখানে আমাদের পক্ষের মানুষও আমাদের বিপক্ষে চলে গেছেন। পুরো ভিডিওটি থাকলে তারা হয়তো বিষয়টি বিবেচনা করতে পারতো। তিনিও আগের পডকাস্টের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান এবং দুঃখ প্রকাশ করেন।
নিজের অবস্থান জানান দিয়ে সাদমান সাদিক বলেন, আসলে মানুষ একটা কথা বললে তো সেটি আর ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না।.তবে আমরা সেই ভুল থেকেই আমাদের পডকাস্টটি ডিলেট করে দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা যে ভুলে করেছি, সেটি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আপনাদের সবার কাছেই দুঃখ প্রকাশ করছি। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো এ ঘটনায় আমাদের অনেক ফ্যান আমাদেরকে বাজেভাবে সমালোচনা করেছেন। আবার আমাদের পছন্দ করেন না, এমন অনেকে গঠনমূলক সমালোচনা করেছেন। আসলে এখান থেকে আমরা শিক্ষা নিচ্ছি।