ছাত্ররাজনীতিতে আগ্রহের চেয়ে তিন গুণ বেশি অনাগ্রহ যুবকদের
সম্প্রতি নাগরিক প্ল্যাটফর্মের যুব জরিপে ছাত্ররাজনীতিতে যুবকদের আগ্রহের চেয়ে বেশি অনাগ্রহের বিষয়টি উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, রাজনীতি এবং ছাত্ররাজনীতিতে আগ্রহী মাত্র ১১ দশমিক ৬ শতাংশ যুবক। অন্যদিকে রাজনীতি নিয়ে অনাগ্রহী যুবক মাত্র ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ যা আগ্রহীদের চেয়ে তিন গুণ বেশি।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক যুব সম্মেলনে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যুব জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। সম্মেলনে ‘দেশ হোক তেমন যুবরা চায় যেমন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে সারা দেশের কয়েক শ তরুণ অংশ নেন।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম গত সেপ্টেম্বর ও চলতি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে অনলাইনে এই জরিপ করেছে। এতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দেশের ৫ হাজার ৭৫ জন যুবক অংশগ্রহণ করেন। জরিপে তাঁদের কাছে ভোট ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, নীতি যুক্ততা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও প্রতিনিধিত্ব-সম্পর্কিত বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়।
এই সম্মেলনে যুব জরিপের ফলাফল প্রকাশের ছাড়াও সংসদীয় বিতর্ক’রও আয়োজন ছিল। যার বিষয়বস্তু ছিল যুবসমাজ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত কি না।
জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৩ দশমিক ১ শতাংশের মতামত প্রকাশে দ্বিধা, অস্বস্তি ও সংকোচ রয়েছে। অন্যদিকে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে অতীতে হেনস্তা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন যুবরা।
আরও পড়ুন: তিন নেতাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ ঢাবি ছাত্রদলের
এ ছাড়া জরিপে উঠে এসেছে ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ যুব জাতীয় নির্বাচনে কখনো ভোট দেননি। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যা ৪৬ শতাংশ।
জরিপে আরও উঠে এসেছে, এ জরিপে অংশগ্রহণকারীর ৭৯ দশমিক ১ শতাংশ যুবকের কাছে উন্নয়ন বা রাজনীতিবিষয়ক খবরের তথ্যের প্রধান উৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে উন্নয়নের প্রধান বাধা হিসেবে মনে করেন ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ। উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধার মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব এমনটি মনে করেন ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ। এ ছাড়া ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ যুব মনে করেন, প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
যুবরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার, শিক্ষার অভিগমন এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধিতে সাফল্য এসেছে। তবে জরিপে অংশ নেয়া ১৮.৭%তরুণ সুযোগ পেলে স্থায়ীভাবে চলে যেতে চান বিদেশে।
আলোচনা পর্বের সঞ্চালক এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব বিষয়ে বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে কতখানি যুক্ত করা গেছে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁরা ভূমিকা রাখতে পারছেন কি না, সে প্রশ্ন সামনে আসে। তরুণদের ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রয়োজন। সামনে নির্বাচনে যুবসমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মতামত প্রকাশে যুবকদের দ্বিধা, অস্বস্তি বা সংকোচ প্রসঙ্গে সম্মেলনে সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যুবরা দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন। এর অপব্যবহার নিয়েও আশঙ্কার কথা বলেছেন তাঁরা। যুবদের দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কার কথা নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় নিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কাজ করছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা থেকে মুক্তি, সুস্বাস্থ্য ও ভালো থাকা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, শোভন কাজ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।
২০১৬ সালের জুন থেকে কাজ করা এই প্ল্যাটফর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ করে তোলা।