র্যাগিংয়েই মৃত্যু হয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ছাত্রের, অভিযোগ পরিবারের
মালয়েশিয়ার সারওয়াক রাজ্যের কুচিংয়ের জালান গম্বিরের ভাসমান মসজিদের পাশের একটি নদী থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইরফান সাদিকের (২১) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই রাজ্যের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। তবে নদীতে পড়ে নয়, র্যাগিংয়ের শিকার হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। মৃত্যুর আগে অমানবিক নির্যাতনের এক ভিডিও হাতে আসার পর এ অভিযোগ পরিবারের।
আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইরফানের মরদেহ গ্রহণ করে তার পরিবারের দাবি, সহপাঠীদের নির্মম নির্যাতনের কারণেই মারা গেছেন ইরফান। অথচ বিষয়টি চেপে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার সারওয়াক রাজ্যের কুচিংয়ে জালান গম্বিরের ভাসমান মসজিদের পাশের নদী থেকে ইরফান সাদিকের (২১) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে নদীতে পড়ে গিয়ে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্যাতনের ভিডিওটির দৃশ্যও ১৮ সেপ্টেম্বরের। ভিডিওতে দেখা যায়, জালান গম্বিরের ভাসমান মসজিদের বারান্দায় ইরফানকে বিবস্ত্র করে চলছে র্যাগিং। নির্যাতন থেকে বাঁচতে নানা আকুতি করছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।
সেদিনই নির্যাতনের স্পট থেকে নদীর ৩ মিটারের মধ্যে পাওয়া যায় ইরফানের মরদেহ। কয়েক ঘণ্টা পর পরিবারকে সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি জানায়, পানিতে ডুবে মারা গেছে ইরফান। আট দিন পর মরদেহ এসে পৌঁছায় দেশে। ছেলের অকাল মৃত্যর জন্য সহপাঠীদের নির্মম নির্যাতনকে দায়ী করেন ইরফানের বাবা। ইরফানের বাবা বলেন, ইরফান আমাদেরকে বলে গেছে, তার বন্ধুরা তাকে র্যাগিং করেছে। মানসিক, শারীরিক বিভিন্নভাবে টর্চার করেছে। যার কারণে সে মানসিকভাবে ট্রমার মধ্যে ছিল।
প্রায় ১ বছর আগে মালয়েশিয়ার সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পড়তে যান ইরফান সাদিক। পরিবারের দাবি, শুরু থেকেই র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছিলো সে। কেটে দেয়া হয়েছিল মাথার চুল। ইরফানের বোন বলেন, আমার ভাই অনেক বেশি সেন্সিবল একটা ছেলে ছিল। কিন্তু ওরা তাকে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি হয়রানি করেছে বলে আমার মনে হয়। কারণ, ভিডিওতে আমার ভাই বারবার বলছে, সুইনবার্ন ইজ রেসিস্ট।
পরিবার থেকে এ বিষয়ে আগেও জানানো হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়কে। চুপ ছিল সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি। মৃত্যুর পর সে ভিডিওর রেফারেন্সসহ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসকে র্যাগিংয়ের বিষয়ে অভিযোগ জানান ইরফানের ফুফাতো ভাই মারজুক আহমেদ।
মারজুক বলেন, ই-মেইলের এখনও কোনো উত্তর দেয়নি। মালয়েশিয়ান পুলিশ থেকেও আমরা তেমন কোনো সদুত্তর পাইনি। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো সদুত্তর পাইনি।
ইরফানের পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতনে সবসময় নেতৃত্ব দিতো বাংলাদেশি ২ সহপাঠী। পরে তাদের সাথে যোগ হয় অন্যান্য বিদেশি শিক্ষার্থীরাও। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি ইরফানের পরিবারের।