৩০ দিনের ছুটি নিয়ে ১ বছর ধরে লন্ডনে শিক্ষিকা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৪ AM , আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৪ AM
চিকিৎসার জন্য ৩০ দিনের ছুটি নিয়ে ১ বছরেও বিদ্যালয়ে দেখা নেই সহকারী শিক্ষিকার। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ৭৯ পূর্ব লামনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার লিজা। শিকিক্ষার ৩০ দিনের ছুটি শেষ হলেও ১ বছররেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি তিনি। লন্ডনে বসবাসের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু তার চাকরি এখনও বহাল রয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষিকা শারমিন আক্তার লিজা ৩০ দিনের চিকিৎসা জনিত ছুটি নিয়ে বিদেশ পারি দেন। সেই ছুটি শেষ হয়ে এক বছর পার হলেও বিদ্যালয়ে আসার নামগন্ধ নেই তার। তার থেকে কারো হিসাব নেয়ার নেই। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবগত করা হলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অদৃশ্য কারণে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহতসহ শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। ওই বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য প্রধানশিক্ষকসহ শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ছয়জন। এতে বিদ্যালয়ে পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকগন।তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাকে ভিন্ন ভাবে দেখা যায়, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন নাকি ঘুরতে গেছেন বলেন দাবি অনেকের।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে শিক্ষিকা শারমিন আক্তার লিজা চিকিৎসার জন্য ৩০ দিনের ছুটি নিয়ে বিদেশ পারি দেন।
শিক্ষকরা বলছেন, ১৪১ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য শিক্ষক মাত্র ছয়জন তাতেই শিক্ষকদের পাঠদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মাত্র ছয়জন শিক্ষক তার মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষিকার এমনভাবে বিদ্যালয়ে না আসায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। এই বিদ্যালয়ে খুবই প্রতিভাবান শিক্ষার্থী রয়েছে তারা তাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্কুলটির প্রধানশিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হেলেনা বেগম বলেন, লিজা ম্যাডাম গত বছর আগস্ট মাসের ১০ তারিখে এক মাসের ছুটির আবেদন করে ১৫ আগস্ট বিদেশে গেছেন। কিন্তু এখন এক বছর হয়ে গেল, তার কোনো খোঁজ-খবর নেই। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে একাধিকবার জানানো হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি। তবে তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. ফরিদ খান বলেন, এক শিফটের স্কুলে একসঙ্গেই ছয়টি ক্লাস হয়। আমরা ছয়জন শিক্ষক একটানা পাঠদান করলে শেষের ক্লাসগুলোতে খুব টায়ার্ড বোধ করি। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অফিসিয়াল কাজে স্কুলের বাইরে থাকলে বাকী পাঁচজনে কোনোভাবেই পাঠদান করা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান আশাকরি।
আরও পড়ুন: এআইয়ে বাড়ছে অপরাধ, নতুন আইনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়
অভিযুক্ত শিক্ষিকা শারমিন লিজার বাড়িতে গেলে তার মা জানান, লিজা হেড মাস্টারসহ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ছুটি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন গেছে। এ বছরের জানুয়ারিতে দেশে ফিরবেন। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষিকা শারমিন লিজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ছুটি নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছি। চাকরি বহাল থাকায় শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, লন্ডনে আসতে ব্যাংক থেকে লোণ নিতে হয়েছে আর তাই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আসতে পারিনি। আমার মা সহজ-সরল মানুষ তিনি না বুঝে বলে ফেলেছেন আমি এ বছর দেশে ফিরবো। দু-এক দিনের মধ্যেই আমার বোন অফিসে যোগাযোগ করে ইস্তফাপত্র দিয়ে আসবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর রেজাউল ইসলাম বলেন, তিনি ডিপিইও-কে ছয় মাসের সময় জানিয়েছেন এবং এক বছর পার হওয়ার পর পুনরায় জানিয়েছেন। তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা, তা তিনি জানেন না।