সাইবার নিরাপত্তা বিল ঢেলে সাজাতে মন্ত্রী-এমপিদের চিঠি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো সাইবার নিরাপত্তা বিল যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের চিঠি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পাঠানো ওই চিঠি আজ শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানিয়েছে টিআইবি।এতে বলা হয়, টিআইবি মনে করে; ‘খসড়া সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩’ এ দক্ষতা ও সক্ষমতা বিবেচনা করা হয়নি। বরং বিচারিক নজরদারি ছাড়াই অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিলটি যাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো মত, চিন্তা, বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে এমপি-মন্ত্রীদের জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সংশ্লিষ্টদের কাছে এ সংক্রান্ত ই-মেইল পাঠানো হয়। এতে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮ থেকে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩: তুলনামূলক পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক চিঠি পাঠিয়েছে টিআইবি।
চিঠিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) রহিত করে সাইবার নিরাপত্তা বিল (সিএসএ) ২০২৩ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে প্রমাণিত হয়েছে ডিএসএর অপব্যবহারের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো বিভিন্ন মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে।
তিনি বলেন, ফলে জনমনে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। সরকার যা অবসানের বাধ্যবাধকতার উপলব্ধি করেছে। একইসঙ্গে মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে, যেসব কারণে ডিএসএ রহিত করা হচ্ছে, সিএসএতে সেসব উপাদান থাকবে না। যার পরিধি ও উদ্দেশ্য হবে সুনির্দিষ্ট সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা বিধান করা।
টিআইবি জানায়, ‘খসড়া সিএসএ বিল-২০২৩’ এ ডেটা ও তথ্য অপসারণে বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবারিত ক্ষমতা এবং অনেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। পরিবর্তে ডিএসএ ২০১৮- এর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ধারণার ওপর ভরসা করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, ক্ষতিকর কন্টেন্ট অপসারণের দরকার আছে। তবে সেটা সীমিত হতে হবে। দেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারায় মত, চিন্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কর্তৃপক্ষের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা উদ্বেগজনক।
টিআইবি জানায়, এই বিলে দক্ষতা ও সক্ষমতাকে বিবেচনা করা হয়নি। বিচারিক নজরদারি ছাড়াই অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কারাদণ্ড বাদ দিয়ে অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা আইনের জন্য অপরিহার্য অনেক উপাদান নেই। এমন কিছু বিষয় সংশোধিত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে সুপারিশ করছে টিআইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমসহ সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে খসড়া সিএসএ বিল-২০২৩ ঢেলে সাজাতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।