ইডেন ছাত্রী আঁখির মৃত্যুতে স্বামীর গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি
ইডেন কলেজছাত্রী মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনেরও গাফিলতি পেয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। এছাড়াও মোট ১৮ টি ভুল শনাক্ত করা হয়েছে। এ সকল ভুলের জন্য তার স্বামী সুমন ছাড়াও ডা. সংযুক্ত সাহসহ তিন চিকিৎসক ও সেন্ট্রাল হাসপাতালকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গত মাসের শেষ সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা, শাহাজাদী মুস্তার্শিদা, মুনা সাহার বিরুদ্ধে ১০টি, সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৪টি এবং আঁখির স্বামী ইয়াকুবের বিরুদ্ধেও ৪টি ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।
দোষী চিকিৎসকদের বিষয়ে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৬ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) শৃঙ্খলা বৈঠক ডেকেছে। এ ছাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. লিয়াকত হোসেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে ডা. সংযুক্তার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন ৯ জুন রাতে তিনি বিদেশ যাবেন, তা রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এ ছাড়া তিনি ফেসবুকে স্বাভাবিক প্রসব নিয়ে অতিরঞ্জিত ও অনৈতিক প্রচারণা চালান।
ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদার বিরুদ্ধে বলা হয়, তার কোনো গাইনোকলজি ডিগ্রি নেই। ডা. সংযুক্তার অনুপস্থিতির কথা তিনি রোগীর স্বজনদের কাছে গোপন রেখেছিলেন। পাশাপাশি ডা. শাহজাদী কথাবার্তা ও আচার-আচরণে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যাতে রোগীপক্ষের মনে হয় যে সংযুক্তা সাহা ওই সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত করাতে ডা. শাহাজাদী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেননি। তিনি রোগীর বাস্তব ও প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন না করে বিভিন্ন উপায়ে স্বাভাবিক প্রসব করানোর চেষ্টা করেছিলেন।
চিকিৎসক মুনা সাহার বিরুদ্ধেও সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতির কথা গোপন করার কথা জানানো হয়েছে। হাসপাতালে রোগী আসার পর তিনি এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন তাতে রোগীপক্ষের মনে হয়নি যে ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে উপস্থিত নেই।
এদিকে সংযুক্তা সাহা ও মুনা সাহার নিবন্ধন নবায়ন না থাকার পরও চেম্বার করার সুযোগ দেওয়া, হাসপাতালে সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন করা, তার অনুপস্থিতিতে রোগী ভর্তি করে অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেআইনি প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া।
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইয়াকুব স্ত্রীকে নিয়মিত পরীক্ষা করাতেন না, আঁখি তীব্র রক্তশূন্যতায় ভুগলেও চিকিৎসা করাননি, স্বাভাবিক প্রসবে আগ্রহ বেশি থাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও স্ত্রীকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আনা।