১০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩

টিউশনি করে জিপিএ-৫ পেলেও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত রাত্রির

রাত্রি সরকার  © সংগৃহীত

নেত্রকোনার মদন শহীদ স্মরণিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাত্রি সরকার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি ও পড়ালেখার খরচের চিন্তায় বাবা-মায়ের চোখমুখেও হতাশার ছায়া। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রাত্রি অন্য শিশুদের টিউশনি পড়িয়ে এসএসসি তে জিপিএ-৫ পেয়েছে। 

জানা গেছে, মদন শহীদ স্মরণিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি তে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে রাত্রি সরকার। মদন পৌর সদরের ৭ নং ওয়ার্ডের আশকিপাড়া এলাকার দিনমজুর দুই সন্তানের জনক স্বপন সরকারের মেয়ে রাত্রি সরকার। রাত্রির বাবা খুবই হতদরিদ্র পড়া-লেখার খরচ চালাতে যখন হিমশিম খাচ্ছিল পরিবারটি ঠিক এ সময় পড়া-লেখার পাশাপাশি নিজ খরচ মেটাতে অন্য শিশুদের টিউশনি পড়ানো শুরু করে রাত্রি।

ভিটাবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের। থাকার মত আছে একটি টিনের চাপড়া ঘর। অন্যের জমিতে কৃষি কাজ ও বাজারে তরকারী বিক্রি করে সংসার চালান তার বাবা। অভাবের এই সংসারে কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে রাত্রি । 

রাত্রি সরকার জানায়, এতদিন নিজে টিউশনি পড়িয়ে পড়া-লেখার খরচ জুগিয়েছি। বাবার বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। স্যারেরা আমাকে বই দিয়ে ফ্রিতে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ দিয়ে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। আমার ইচ্ছা একটি ভাল কলেজে ভর্তি হতে। ভালো কোনো কলেজে ভর্তি এবং পড়া-লেখার খরচ চালানো আামার দিনমজুর বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থের অভাবে আমার ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমি ভালভাবে ভাল কলেজে ভর্তি হতে চাই! ভবিষ্যতে একজন ইউএনও  হয়ে দেশ ও অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই। জানিনা সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না।

রাত্রির মা দীপ্তি  সরকার বলেন, অভাব-অনাটনের মধ্যেও মেয়েটি অন্য বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়ে ভালো ফলাফল করেছে। ভাল ফলাফল শোনে খুশি হইছিলাম ঠিকেই, কিন্তু মেয়েটি ভাল কলেজে পড়ার জন্য কান্নাকাটি করতেছে। কেমনে ভর্তি করবো? এমনেই তার বাবা দিন মজুরের কাজ করে এবং মাঝে মধ্যে সবজি ব্যবসা করে কোন মতে সংসার চলে। কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। ভাল কলেজে ভর্তি করার সামর্থ্য আমরার নাই। সমাজের বিত্তশালী আর সরকার যদি সহযোগিতা  করেন তাহলে হয়ত মেয়েটারে ভাল কলেজে ভর্তি করানো সম্ভব হবে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আক্কাস উদ্দিন বলেন, মেয়েটি খুবই কষ্ট করে প্রাইভেট পড়িয়ে ভাল ফলাফল করেছে।  রাত্রি হতদরিদ্র হওয়ায় স্কুল থেকে তার কোনো পরীক্ষার ফি সহ কোনো টাকা নেওয়া হতো না। গরিব পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। সমাজের বিত্তশালী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এগিয়ে এলে মেয়েটির শিক্ষার পথ সুগম হবে বলে আমার বিশ্বাস।