এটিইও পদে নিয়োগ জটিলতা, হাইকোর্টে রিট নতুন সহকারী শিক্ষকদের
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদে নিয়োগের আবেদন প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞতার শর্ত নিয়ে জটিলতায় পড়েছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। পরে একাধিকবার বিষয়টি সংশোধন করা হয়েছে। তবে এরপরও জটিলতা দূর না হওয়ায় আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করে পিএসসি। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাইকোর্টে রিট করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সদ্য যোগদান করা সহকারী শিক্ষকেরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ৩০ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তারা রিট আবেদনটি করেন। এতে সদ্য যোগদানকারী সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে মো. রাফিউল ইসলামী রাফিসহ পাঁচজন শিক্ষক বিবাদী হয়েছেন। অ্যাডভোকেট মো. তারেকুল ইসলাম তাদের পক্ষে রিট আবেদন করেছেন। আজ রোববার (৬ আগস্ট) এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে। রিটকারী অন্যরা হলেন- মো. ইউনুছ তালুকদার, মো. শামীম কবির আল গালিব, মো. জাহিদ হাসান ও মো. নাসিম আহমেদ।
ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষকেরা জানান, গত ২৬ জুন পিএসসি কর্তৃক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে ৪০ ক্রমিক নম্বরে উল্লেখিত পদ ‘সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও)’-এ আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক অনুর্ধ ৪৫ বছর। এতে চলতি বছর নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা যোগ্য বলে বিবেচিত হন।
কিন্তু পিএসসির আবেদন নির্দেশিকায় বিভাগীয় প্রার্থী বলতে ২ বছরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা হয়, যা আমাদের মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ (সংশোধিত ১৯৯৪) ও ২০০৩ এর পরিপন্থী। এ অবস্থায় তারা একটি ধোঁয়াশার মধ্যে পড়েন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা দ্বিধায় থাকেন যে, আবেদন করতে পারবেন কি পারবেন না।
এরইমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন যে, নতুন শিক্ষকরা আবেদন করতে পারবেন। তবুও পিএসসির ওয়েবসাইটে নতুনদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়নি অভিজ্ঞতা ক্রাইটেরিয়া ঘরটি বাধ্যতামূলক থাকার দরুণ। এ পরিস্থিতিতে নতুনদের পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করে যৌক্তিকতা তুলে ধরে একটি লিখিত আবেদন দেন এবং মন্ত্রণালয় ইতিবাচকভাবে তাদেরকে আশ্বস্ত করে।
আরো পড়ুন: এটিও পদের ১৫৯ জন নিয়োগের আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত
এর পরপরই মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পিএসসিতে পাঠানো হয়, যার দ্বিতীয় প্যারায় নতুন শিক্ষকদের আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আবেদনের সুযোগদানে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পিএসসি পরে নতুন শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীর আবেদনে দু’বছরের যে বাধ্য বাধকতা ছিল সেটি শিথিল করে এবং অভিজ্ঞতার ঘরটি তুলে নেয়। ফলে নতুনরা আবেদনের সুযোগ পায়।
তারা জানান, এরপর নতুন শিক্ষকরা আবেদন করা শুরু করে। কিন্তু ৪-৫ দিন পর পিএসসি হঠাৎ করে নতুনদের আবেদনের সুযোগ বন্ধ করে নতুন করে আবার অভিজ্ঞতার ঘরটি যুক্ত করে। এতে নতুন শিক্ষকরা হতাশ হণ। কারণ ইতোমধ্যে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষক আবেদন করে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পিএসসির সাথে যোগাযোগ করা হলেও তেমন কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
শিক্ষকদের ভাষ্য, টেলিটকের ত্রুটির কথা জানায়। পাশাপাশি এও জানায়, নতুন শিক্ষকরা যারা দু’বছর পূর্ণ করেনি, তারা আবেদন করতে পারবেন না। অথচ নতুন শিক্ষকরা যারা আবেদন করে ফেলেছেন তারা প্রত্যেকে ৫০০ টাকা করে খরচ করেছেন। এ টাকার কথা জিজ্ঞেস করলে পিএসসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সদুত্তর দিতে পারেনি।
তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাধারণ নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় প্রার্থীর সংজ্ঞা বলেন। এটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন শিক্ষকরা তাদের যৌক্তিক অধিকার রক্ষায় আইনি পদক্ষেপ রিট করেছেন বলে জানান। নতুন শিক্ষকেরা আবেদনের পক্ষে সব তথ্য-উপাত্তা আদালতে উপস্থাপন করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রোববার পর্যন্ত চান বলেও জানিয়েছেন তারা।