শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে শিক্ষকদের দাবি কি সরকার মানবে?
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকের পরও লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ডাকে হাজারো শিক্ষক এ কমর্সূচি পালন করছেন। তবে দাবি আদায়ের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক কোনও বার্তা তারা পাননি।
গত বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সেখানে তিনি বলেন, জাতীয়করণ নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। জাতীয়করণের যৌক্তিকতা আছে কি নেই এবং শিক্ষা ও শিক্ষকদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি দাবি করে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওসার আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেখা করতে আসবেন বলে তারা আশা করলেও তিনি আসেননি। সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থায় হাজার কোটি টাকার ব্যয়ে এ দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে শিক্ষকরাও বলছেন, এবার তারা দাবি আদায় না করে ফিরবেন না। তারা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। এর সমাধান না হলে তারা আমরণ অনশনে যাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বদলির সুযোগ না থাকায় পরিবার এবং বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে থাকতে হয়। অবসর-ভাতা দেওয়ার জন্য ১০ শতাংশ বেতন থেকে কেটে রাখা হয়। অথচ অবসরে গেলে টাকা পেতে ৪-৫ বছর লেগে যায়। অনেক শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারেন না।
শিক্ষকদের ভাষ্য, গোটা চাকরিজীবনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক শুরুতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান। সরকারি স্কুলে দেওয়া হয় ১৬ হাজার। তারা শতভাগ উৎসব-ভাতা বা বোনাস পেলেও বেসরকারিতে দেওয়া হয় ২৫ শতাংশ। অথচ বর্তমানে এনজিও কর্মীদেরও শতভাগ উৎসব-ভাতা দেওয়া হয়।
চিকিৎসা-ভাতা মাসে ৫০০ টাকা পান তারা। যেখানে চিকিৎসকের ভিজিটই ১০০০ টাকা দিতে হয়। বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসে ১ হাজার টাকা পান। তাদের প্রশ্ন, দেশের কোন অঞ্চলে এ টাকায় বাসা ভাড়া পাওয়া যায়? অথচ সরকারি শিক্ষকদের বেতনের ৪৫-৫০ শতাংশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, আন্দোলনের সপ্তম ও নবম দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ডাক পেয়েছেন তারা। কিন্তু বৈঠক থেকে তারা কার্যকর আশ্বাস পাননি। তাই এখন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বললেই দাবি আদায় হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত হতাশ করা হলে আমরণ অনশনে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
এসব সমস্যা সমাধানের ডিসিদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। আন্দোলনও করেছেন। তবে সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। তাই এ আন্দোালন করছেন তারা। বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার হয়েও ঘটনাক্রমেই রাজনীতিবিদ হয়েছেন। শিক্ষকদের দুর্দশা তিনি কীভাবে বুঝবেন। পেটের দায়ে এখন রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের মোবাইল ফোনে কলা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে এর আগে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব মিতব্যয়িতার নীতি নিয়েছে। সেখানে হাজার কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির আন্দোলনের যৌক্তিকতা কী?
তিনি বলেন, তারা শিক্ষামন্ত্রীর কথায় সন্তুষ্ট না হলেও তিনি সত্য কথা বলেছেন। মিথ্যা আশ্বাস দেননি। শিক্ষকদের অনেক সংগঠন আছে। আন্দোলনকারীরা তাদের ক্ষুদ্র অংশ। বুধবার আলোচনার পরও তারা কেন আন্দোলন করছেন তা বুঝতে পারছেন না।
বুধবারের সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সম্ভব নয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এ অবস্থার মধ্যে বিরাট আর্থিক বোঝা কাঁধে নেয়া কোনও সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়। শিক্ষকরা যে দাবিতে আন্দোলন করছেন, তা কমিটি করে গবেষণা করে দেখার জন্য তাদের দায়িত্ব দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনসহ অনেক খরচই সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়। কিন্ত সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের আয় থেকে কোন অর্থ নেয় না।