চাকরিতে যোগদানে বাধ্যতামূলক হচ্ছে ডোপ টেস্ট
মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকারসহ সব প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা ডোপ টেস্ট-সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া প্রস্তাব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ পরীক্ষা বিধিমালা, ২০২২-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বিবেচনাধীন রয়েছে। খসড়া বিধিমালায় মোট ৪২ বিধি এবং তফসিলে ৫টি ফরম রয়েছে।
তিনি বলেন আরও বলেন, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরিতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে মাদক নিয়েছেন মর্মে সন্দেহ হলে, গাড়িচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে, কর্মরত গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়েছেন মর্মে সন্দেহ হলে, সরকারি-বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কারও বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে মাদক নেয়া হয়েছে মর্মে সন্দেহ হলে; বিদেশ গমনে ইচ্ছুক কর্মীদের ক্ষেত্রে; আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স দেয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে; আকাশযান বা নৌযান চালানোর লাইসেন্স দেয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে এবং প্রয়োজনে সরকার নির্বাহী আদেশে ডোপ টেস্টের নতুন ক্ষেত্র নির্ধারণ করতে পারবে।
ডিএনসি সূত্র বলছে, বর্তমানে ঢাকায় কেন্দ্রীয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ডোপ টেস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ডোপ টেস্ট করার সুযোগ রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় এই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়া অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে সরকারি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প কার্যক্রম চলছে।
আরও পড়ুন: মাদক সেবন দেখে ফেলায় বেরোবির ৬ শিক্ষার্থীকে মারধর
তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকবিরোধী সংগঠন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ। সরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাবে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। অথচ, মাদক নির্মূলে ২০১৮ সালে সারা দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ লাখ। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে সরকারের পাঁচটি সংস্থা অভিযান চালিয়ে ২৫ ধরনের মাদকের মধ্যে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার ও ইঞ্জেকটিং ড্রাগ উদ্ধার করে প্রায় ১৪ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা মূল্যের। গত বছর দেশে শুধু ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ পিস। আগের বছর উদ্ধার হয় ৫ কোটি ৩০ লাখ পিসের বেশি। অথচ, ২০০৯ সালে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১ লাখ ৩২ হাজার।
ডিএনসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ আইনে সারাদেশে ৪১ হাজার ৭৫৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি ৫১ হাজার ৮৩৪ জন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১ হাজার ২৩১ জনকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মানজুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক-সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। বিধিমালা না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনা সম্ভব না। এ কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে একটা খসড়া বিধিমালা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে আরো কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ফেরত পাঠায়।
ফেরত পাঠানোর পর ডিএনসি থেকে আবার ডোপ টেস্ট বিধিমালা নিয়ে কাজ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খসড়া বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হওয়ার পর গেজেটে জারি হওয়ার পরে বিধি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হলে শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া যাবে না এমন আশঙ্কায়, চাকরিপ্রতাশীরা চাকরি না হওয়ার ভয়ে মাদক থেকে বিরত থাকবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে মাদকাসক্তদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে।