৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও চাকরি না পেয়ে হাসপাতালে
মাদারীপুরে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েও চাকরি না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শেখ শহিদুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে। চার বছর আগে প্রতিবন্ধী লুৎফর মুন্সির মেয়ে লাভলী আক্তারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন লুৎফর রহমান। শুধু তাই নয়, ওই স্কুলে চার বছর বিনা বেতনে আয়ার কাজ করেন লাভলী।
অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি মর্জিনা নামে এক নারী আরও বেশি টাকা দেওয়ায় ওই পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খবরটি শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েন লাভলী। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা যায়, সদর ঝাউদি ইউনিয়ন ঝাউদি এলাকার শেখ শহিদুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। একজন অফিস সহকারী, একজন পরিছন্ন কর্মী, একজন নাইট গার্ড ও একজন আয়া। পরীক্ষার আগে আয়া পদের ঘুষের আলোচনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ৪-৫ বছর ধরে ওই স্কুলে আয়া পদে বিনা বেতনে কাজ করছেন ঘটমাঝি ইউনিয়নের পূর্ব চিরাইপারা গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা লাবলী আক্তার ও তার বাবা লুৎফর মুন্সি।
জানা গেছে, গত ২৪ জুন ডিডির প্রতিনিধি মাদারীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা মন্ত্রালয়ের প্রতিনিধি মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের উপস্থিতে বিদ্যালয়ে চারটি পদের নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু অসাধু উপায়ে আয়া পদে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান লাবলী আক্তারকে ২০১৮ সালে মার্চ মাসের দিকে স্কুলে আয়া পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা নেন। লাবলী ভিটামাটি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা দেন প্রধান শিক্ষককে। টাকা দেওয়ার পর থেকে দীর্ঘ চার বছর ধরে তিনি স্কুলে বিনা বেতনে কাজ করে আসছিলেন।এদিকে ঝাউদি ইউনিয়নের গুহাতলা গ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিজাম শিকদারের মেয়ে মর্জিনা আক্তার (প্রার্থীর) কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে লাবলী আক্তারকে নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য চাকরি প্রত্যাশীসহ স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
চাকরিপ্রত্যাশী লাভলী বলেন, ছয় বছর আগে আমার বাবা লুৎফর মুন্সি স্ট্রোক করে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। সে সময় সংসার চালানোর কেউ ছিল না। আমিই সংসারের হাল ধরি। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারে জোগান দেন। চার বছর আগে লুৎফর রহমান স্যার আমাকে স্কুলে আয়া পদে চাকরির দেওয়ার কথা বলায় আমি ঋণ, জমি ও ভিটা বিক্রি করে তাকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, লুৎফর রহমান স্যার মর্জিনা নামের এক প্রার্থীর কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে পরীক্ষায় ফেল দেখিয়েছে। এদিকে চার বছর ধরে আমি ওই স্কুলে কাজ করে আসছি। হেডমাস্টার আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার প্রতিবন্ধী বাবাকে দিয়েও নাইট গার্ডেরও কাজ করিয়েছে। আমরা চার বোন, আমাদের কোনও ভাই নেই। চাকরি না পেলে আমার বেঁচে থেকে আর কি লাভ হবে? আমি সরকার এবং প্রশাসনের কাছে আমার চাকরি ফেরত চাই এবং হেডমাস্টারের শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই মেয়ে পরীক্ষায় পাস না করায় আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আমি লাভলীর কাছ থেকে কোনও টাকা নিইনি। তবে সে দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে এটা সত্য।
এ বিষয়ে জানতে যারা নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।