সেন্ট্রালের পর এবার ল্যাবএইডে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ
সেন্ট্রাল হসপিটালে ডেলিভারির সময় ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর পর মা ইডেন কলেজছাত্রী মাহবুবা রহমান আঁখিও মারা গেছেন। সেই মৃত্যুর রেশ না কাটতেই এবার গ্রিন রোডের ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় এক নারী রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোগীর নাম হাসিনা বেগম। রোগীর মৃত্যুর পর ওই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ এনে মৃত হাসিনার স্বামী মো. রাসেল রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা করেন।
জানা যায়, গত ১৭ মে ল্যাব এইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারে ডা. আখতার আহমেদ শুভর তত্ত্বাবধানে পাকস্থলীর টিউমার অপারেশন করতে হাসিনা বেগমকে ভর্তি করানো হয়। তবে ওই চিকিৎসক নিজে রোগীকে না দেখে আগের করা পরীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে পরদিন অর্থাৎ ১৮ মে হাসিনা বেগমের অপারেশন করে টিউমার অপসারণ করেন। অপারেশনের দুদিন পর রোগীর কাটা জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। যার জন্য তাকে ১৩০ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়।
কিন্তু এতেও যখন রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ করানো যাচ্ছিল না তখন ২৯ মে পুনরায় রোগীর দ্বিতীয় অপারেশন করেন ডা. আখতার আহমেদ শুভ। কিন্তু এতেও হাসিনা বেগমের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রোগীকে রিলিজ করতে বলা হলে স্বজনরা রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই চিকিৎসক নিজেই কেবিন ব্যবস্থা করে দিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসিনা বেগমকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে গত ১৭ জুন ভোরে তার মৃত্যু হয়।
হাসিনার স্বজনরা জানায়, হাসপাতালে ভর্তির পর কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রোগীকে পাকস্থলীর টিউমার অপারেশন করা হয়। কিন্তু অপারেশনের দু’দিন পর রোগীর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এতে করে হাসপাতালের দায়িত্বরত হেপাটোবিলিয়ারি অ্যান্ড প্যানক্রিয়াটিক সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. আখতার আহমেদ শুভ কয়েক দিন পর আবারও ওই রোগীর অপারেশন করান। কিন্তু তাতেও বন্ধ হয়নি রক্তক্ষরণ।
পরে ল্যাব এইডের চিকিৎসকের সহায়তায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে ১৭ জুন মারা যান হাসিনা বেগম। রোগীর মৃত্যুর পর ওই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ এনে মৃত হাসিনার স্বামী মো. রাসেল রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলা যান। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা নিতে অপারগ প্রকাশ করে বলে অভিযোগ করেন রাসেল। শুধু তাই নয়, প্রথমে জিডিও গ্রহণ করা হয়নি।
পরে লিখিত আকারে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। তবে, ১৭ জুন ওই রোগীর মৃত্যুর পর গতকাল মঙ্গলবার (২০ জুন) সেই অভিযোগ জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করার কথা জানায় কলাবাগান থানা পুলিশ। পরে হাসিনার স্বামী রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনা, অবহেলার কারণে আমার স্ত্রী মারা গেছে। এজন্য আমি হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি চাই এটার তদন্ত হোক, দোষীদের শাস্তি হোক।
আরও পড়ুন: নবজাতকের পর এবার মা ইডেনছাত্রী আঁখির মৃত্যু
এসময় তিনি চিকিৎসকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার দুদিন পর ডাক্তার ফোন করে বলেন, আমাদের কোনো ক্ষোভ বা রাগ আছে কি না? তিনিও নাকি আমাদের মতো সমব্যথী।
মৃতের ভাই জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বোনের অসুস্থতার পর কদমতলী ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করে জানা যায় তার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। পরে গ্রিনরোড ক্রিসেন্ট গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে পরীক্ষা করানো হয়। সেখানেও পাকস্থলীতে টিউমার ধরা পড়ে। তাদের পরামর্শ ও যোগাযোগের ভিত্তিতে বোনকে (হাসিনা বেগম) ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারে ভর্তি করাই। বোনের চিকিৎসার মূল দায়িত্বে ছিলেন ডা. আখতার আহমেদ শুভ।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তার কাগজপত্র দেখেই সঙ্গে সঙ্গে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। রোগীর সঙ্গে দেখা কিংবা কথাও বলেননি। ভর্তির পরদিনই সরাসরি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অপারেশন করান। ডাক্তার বলেছিলেন, আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। কিন্তু সেখানে ১৬ লাখ টাকা খরচ করেও বোনকে বাঁচাতে পারিনি।