০৯ জুন ২০২৩, ২২:১৩

মালিকানামুক্ত থাকতে চান ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস  © সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর ফাঁকি দেননি। সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠিত ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট’ এবং ‘ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট’-এ দানের টাকার ওপর কর সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইউনূস সেন্টার। শুক্রবার (৯ জুন) কর ফাঁকি, আয়ের উৎস, নিজ থেকে আদালতে যাওয়া সহ নানান ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার করে বিবৃতি পাঠায়  ইউনূস সেন্টার। 

এতে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের কর বিষয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকায় আলোচনা হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত এবং প্রকৃত তথ্যভিত্তিক নয়। কর বিভাগও কোনো পর্যায়ে তা বলেনি। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, কর দিতে হবে কি না এ ব্যাপারে ড. ইউনূসের পক্ষ থেকেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রফেসর ইউনূসের যে টাকা নিয়ে পত্রপত্রিকা টেলিভিশনে আলাপ চলছে তার পুরোটাই প্রফেসর ইউনূসের অর্জিত টাকা। তার উপার্জনের সূত্র প্রধানত: তাঁর বক্তৃতার উপর প্রাপ্ত ফি, বই বিক্রি লব্ধ টাকা এবং পুরস্কারের টাকা। এর প্রায় পুরো টাকাটাই বিদেশে অর্জিত টাকা। এই টাকা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনীত। কর বিভাগ তা অবহিত আছে। কারণ সব টাকার হিসাব তাঁর আয়কর রিটার্নে উল্লেখ থাকে।

মালিকানামুক্ত থাকতে চান ইউনূস

তিনি জীবনে কোনো সম্পদের মালিক হতে চাননি। তিনি মালিকানামুক্ত থাকতে চান। কোথাও তাঁর মালিকানায় কোন সম্পদ নেই (বাড়ি, গাড়ি, জমি, শেয়ার ইত্যাদি)। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর উপার্জনের টাকা দিয়ে তিনি দু’টি ট্রাস্ট গঠন করবেন। তিনি তাই করলেন। একটি ট্রাস্ট করলেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট এবং অল্প কিছু টাকা দিয়ে (মোট টাকার ৬%) উত্তরসূরিদের কল্যাণের জন্য করলেন ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট। ফ্যামিলি ট্রাস্টের মূল দলিলে এই রূপ বিধান রেখে দিলেন যে তাঁর পরবর্তী এক প্রজন্ম পরে এই ট্রাস্টের অবশিষ্ট টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল ট্রাস্টে ফিরে যাবে। তিনি এটা করলেন যাতে তাঁর বর্তমানে এবং অবর্তমানে টাকাটা ট্রাস্টিদের তত্ত্বাবধানে নিরাপদে থাকে এবং তাঁরা ট্রাস্ট দুটির লক্ষ্য বাস্তবায়নে তৎপর থাকে।
 
দানকর প্রশ্ন কেন?

তাঁর নিজের টাকা নিজের কাছে রেখে দিলে তাঁকে কম ট্যাক্স দিতে হতো। কারণ ব্যক্তিগত করের হার প্রতিষ্ঠানিক করের হারের চেয়ে কম। দানকরের প্রসঙ্গটি তুললেন তাঁর আইনজীবী। আইনপরামর্শক বললেন, ট্রাস্ট গঠনের কারণে তাঁকে দানকর দিতে হবে না। কারণ বড় ট্রাস্টটি জনকল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত। ফ্যামিলি ট্রাস্টের ব্যাপারে তিনি পরামর্শ দিলেন যে এরকম ক্ষেত্রে (অর্থাৎ প্রফেসর  ইউনূসের অবর্তমানে তাঁর সম্পদের কী হবে সে চিন্তায় যদি তিনি কোন ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে) তাঁকে কোনো কর দিতে হবে না। কারণ এটা হবে তাঁর অর্জিত টাকার একটি সুব্যবস্থা করে যাওয়া। তাঁর পরামর্শের ভিত্তিতে টাকা স্থানান্তর করার সময় প্রফেসর ইউনূস কোন কর দেন নি। কিন্তু তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর কর বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানালেন যে, এক্ষেত্রে তাঁকে কর দিতে হবে। রিটার্নের যেখানে তিনি দানের তথ্যটি উল্লেখ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তা তার উপর দানকর ধার্য করে দিলেন। তিনি টাকার অংকটা রিটার্নস এ উল্লেখ করায় কর কর্মকর্তা তা দেখে কর আরোপ করেছেন। 

সরকার নয়, আদালতে গিয়েছিলেন ইউনূস নিজেই 

আইন পরামর্শকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রফেসর ইউনূস এব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত চাইলেন। আদালত কর দেবার পক্ষে মত দিয়েছে। এই হলো মোট ঘটনা। এখানে তাঁর কর ফাঁকি দেবার কোনো প্রশ্নই নেই। কর দিতে হবে কি না এব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকেই আদালতের সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়েছিল। আদালতে সরকার যায়নি, প্রফেসর ইউনূস গিয়েছেন। কর বিভাগ কোনো পর্যায়ে বলেনি যে প্রফেসর ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন। এখানে কর ফাঁকি দেবার কোন প্রশ্ন উঠেনি। প্রশ্ন ছিল আইনের প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে। এখন প্রফেসর ইউনূস বিবেচনা করবেন তিনি কর পরিশোধ করবেন নাকি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত চাইবেন। করের আইন যদি এক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য না হয় প্রফেসর ইউনূস তাহলে সে-টাকাটা জনহিতকর কাজে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এই হলো কর নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার পেছনে তাঁর উদ্দেশ্য, ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবার জন্য নয়। 

প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে প্রফেসর ইউনূস ট্রাস্টের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশ ভ্রমনে ব্যয় করেন। বিষয়টি মোটেই সত্য নয়। তার বিদেশ ভ্রমনের সকল ব্যয় আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। শুধু তাই নয়, প্রতি ভ্রমণে একজন অতিরিক্ত ব্যক্তিকে সফরসঙ্গী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যাবার ব্যয় আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। প্রফেসর ইউনূসের বিদেশ ভ্রমণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যয় তার কোন ট্রাস্টকে বা তাঁকে বহন করতে হয় না। কখনো কখনো তাকে নিয়ে যাবার জন্য প্রাইভেট বিমান পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে টাকা খরচের চিন্তা তাঁকে কখনো করতে হয় না।