শিক্ষায় প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ছে: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দেশের শিক্ষাখাতে প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সরকার। জিডিপির হিসেবে এ হার কম হলেও সামগ্রিক হিসেবে এটি বাড়ছে। এখন আমাদের গবেষণায়ও বরাদ্দ বেড়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হয়ে ওঠার আহবান জানিয়ে দেশ গড়ার কাজে শিক্ষার্থীদের আত্মনিবেদন করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সোমবার (৫ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দিনব্যাপী দেশের সবচেয়ে বড় এডুকেশন এক্সপোয় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) এ মেলার আয়োজন করে। এতে ৬০টির বেশি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণা, প্রকাশনা ও উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলা এই এক্সপো উন্মুক্ত থাকবে সকলের জন্য।
ডা. দীপু মনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান হাতিয়ার শিক্ষা। তাই আমাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে আমাদের গবেষণাসহ সকল খাতে জোর দিতে হবে। এখানে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শুধু অবকাঠামো বা বিল্ডিং বানালেই হবে না, আমাদের একাডেমিক কার্যক্রমের গতি বাড়াতে হবে। আমাদের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান ঠিক করে দিবে আমাদের শিক্ষার মান কেমন হবে। একই সাথে আমাদের বাড়াতে হবে গবেষণার সংস্কৃতি বাড়াতে হবে।
প্রচলিত জনপ্রিয় বিষয়গুলোর পাশাপাশি আমাদের ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও দর্শনের মতো বিষয়গুলোয় জোর দিতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের এসব বিষয়ে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিভাগ কখনো বন্ধ হয়েছে বলে আমি শুনিনি বরং বিভাগ ভেঙ্গে নতুন বিভাগ হয়েছে—এখানে পরিবর্তন দরকার। এটি দেশের উচ্চশিক্ষায় কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। একই সাথে যুগের সাথে এর সমন্বয় করা দরকার।
শিক্ষার্থীদের কর্মজগতে প্রবেশের জন্য নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে ডা. দীপু মনি বলেছেন, বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি ভাষাজ্ঞান, সফটস্কিল, সমস্যা সমাধান দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতাসহ সবখাতেই আমাদের তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। নিয়োগকর্তা এবং প্রার্থীর দক্ষতার সমন্বয় করতে হবে। তাহলে কর্মজগতে আমাদের তরুণরা পিছিয়ে থাকবে না। শুধু চাকরি খুঁজলে হবে না—তরুণদের তাদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। সেজন্য আগামী প্রজন্মকে আমরা প্রাথমিক-মাধ্যমিক থেকেই দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এর সুফল এখন না পাওয়া গেলেও ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে ২০২৫ সালের মতো সময় লাগবে। এর সুফল তার পরবর্তী সাত অথবা আট বছর পর পাওয়া যাবে এবং সেজন্য আমাদের সবাইকে একসাতে কাজ করতে হবে। দেশের উচ্চশিক্ষায় ইন্ডাস্ট্রির সাথে একাডেমিয়ার সমন্বয় করতে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বাড়াতে হবে। সরকার দেশে কারিগরি ও মাদ্রাসায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ আরও বাড়াতে চায়। কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে সেজন্য সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
পরিবর্তন সবসময়ই ব্যয় ও কষ্টসাধ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পরিবর্তনের জন্য আমাদের মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। এসময় তিনি দেশে অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা নিয়েও কথা বলেন। দেশের সবার উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্ন জানিয়ে তিনি কারিগরি ও দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার উপর জোর দেন। এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী দেশের শিক্ষা নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।