দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতি ‘ভঙ্গুর’: জাতিসংঘের বিশেষ দূত
জাতিসংঘের চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ে ডি শ্যুটার দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি করেছে সেটিকে 'ভঙ্গুর' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্ন দেশ থেকে উন্নত হওয়ার পরিকল্পনা করছে তার জন্য দেশটির উচিত মজুরি বাড়ানো যেন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সুবিধা পেতে দেশটির জনগোষ্ঠিকে দারিদ্র্যের মধ্যে রাখতে না হয়। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক একটি জরিপে দারিদ্র্য কমে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে উঠেছে। এর ফলে হঠাৎ কোন বিপদ এলে সেটা মোকাবিলা করার মতো অবস্থা তাদের নেই।
ডি শ্যুটার বলেন, অনেক পরিবার দারিদ্র্যসীমার ঠিক উপরে উঠে এলেও তাদের টিকে থাকার সামর্থ্য নেই। তাদের অর্থ সঞ্চয় করা বা পুঁজি জমানোর সক্ষমতা নেই। ধাক্কা সামলানোর মতো কোন সম্পদ তাদের নেই। ফলে এই অগ্রগতি ভঙ্গুর।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উঠে আসার ধাক্কা সামলাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল পরিবর্তন করা উচিত বলে মনে করেন শ্যুটার। তিনি বলে, রপ্তানি বাড়ানোর চাইতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকেই বেশি নির্ভর করা উচিত এই উন্নয়ন মডেলে। যেটি কিনা চীন করেছে ১৫-২০ বছর আগে। যখন তারা স্থানীয়ভাবে মজুরি বাড়াতে শুরু করে। তখন তারা সামাজিক সুরক্ষার পেছনে বিনিয়োগ করতে শুরু করে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার পর বাংলাদেশও চীনের পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে পারে এবং করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাড়া না দেয়াকে 'কলঙ্কজনক' বলেও আখ্যা দেন ডি শ্যুটার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলো তাদের সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে যে আবেদন করছে, তাতে সাড়া মিলছে না। মানবিক সংস্থাগুলো এবছরের জন্য ৮৭ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তার অনুরোধ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার মাত্র ১৭ শতাংশ পাওয়া গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিত করার জন্য সুপারিশ করেছেন বলে তিনি জানান। বেলজিয়ান আইন বিশেষজ্ঞ অলিভিয়ে ডি শ্যুটার ২০২০ সাল থেকে চরম দারিদ্র্য এবং মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি