ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দূরভিসন্ধিমূলক: ইউট্যাব
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে মামলা করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
বুধবার (৩১ মে) সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা জেনেছি যে, গ্রামীণ টেলিকম থেকে শ্রমিক কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মঙ্গলবার (৩০ মে) ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
আমরা মনে করি দুদকের এই মামলা দূরভিসন্ধিমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করে দেশের চলমান পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অন্যতম ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।
ইউট্যাব নেতৃদ্বয় বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের মানুষের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারেনি। সরকার তার অনুগত প্রশাসনযন্ত্রকে দিয়ে দিনের ভোট রাতেই কেটেছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসবের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক না হলে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার পর সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং তার কিছু অনুগত আমলার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতা আড়াল করতেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আবারও মামলা দায়ের করেছে দুদক। আমরা মনে করি এটা সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশেই হয়েছে যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
নেতৃদ্বয় বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। তার সামাজিক ব্যবসার ধারণাও বিশেষ ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে দরিদ্রদের জীবনমানের উন্নতি ঘটানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৬ সালে অধ্যাপক ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
আরও পড়ুন: বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন ড. গোলাম কিবরিয়া
একইসঙ্গে তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও এ পুরস্কারে ভূষিত হয়। অধ্যাপক ইউনূসকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানজনক ডিগ্রি দিয়েছে। ১০টিরও বেশি দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১১২টি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার এবং ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় তাকে। আন্তর্জাতিক ৩৪টি কমিশন এবং ৩৬টি উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ইউনূস। উদ্ভাবনী ব্যবসা নিয়ে নিরলস কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ফরচুন ম্যাগাজিন তাকে এ কালের মহা উদ্যোক্তা অভিহিত করেছে।
তারা বলেন, সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতিসংঘের “অ্যাডভাইজরি বোর্ড অব এমিনেন্ট পার্সন্স অন জিরো ওয়েস্ট” তথা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। “জিরো ওয়েস্ট” বা ‘শূন্য অপচয়’ বিষয়ক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২২ ডিসেম্বর ২০২২ এর রেজুল্যুশন মোতাবেক ড. ইউনূসকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এমতাবস্থায় দুদকের মামলা দায়েরের ঘটনা প্রমাণ করে যেম ড. ইউনূসের সুনাম ক্ষুন্ন করতেই মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।