বিকেলে ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে রাতে মারা গেলেন মা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের রহস্যজনক মৃত্যুর পর এবার তার মা রোকেয়া আক্তার খাতুনও (৭০) মারা গেছেন। দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু অবহেলাজনিত নয় হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন মা রোকেয়া আক্তার। শনিবার (২৭ মে) দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে বিচার দাবি করার পর একইদিন রাতে মৃত্যু হয়েছে ছেলের শোকে কাতর এই মায়ের।
শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে ফেসবুক স্টাট্যাসে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুরন্ত বিপ্লবের বোন শাশ্বতী বিপ্লব।
স্ট্যাটাসে তিনি জানান, ‘আমাদের মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন একটু আগে। ছেলে হারানোর শোক আর সহ্য করতে পারেন নাই। ছেলের দেখা পাওয়ার জন্য অধৈর্য হয়ে উঠেছিলেন। এত রাতে কাকে কাকে জানাব? তাই এইখানেই জানালাম। একটা খুনি দেশ! বিশৃঙ্খল আইনশৃঙ্খলা...আমি ঘেন্না করি।’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ছেলে দুরন্ত বিপ্লবের পাশে শায়িত হবেন মা রোকেয়া আক্তার খাতুন।
শাশ্বতী বিপ্লব আরও বলেন, ‘দূরন্ত বিপ্লব আমার মায়ের প্রথম সন্তান। তাকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন। পাশাপাশি আমরা মৃত্যুর সঠিক তদন্তের জন্য দুই মাস ধরে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম কিন্তু কোনো সহায়তা পাচ্ছিলাম না। এই বিষয়টা নিয়েও মা অনেক কষ্ট পেতেন।’
দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সংকলনটি প্রকাশ ও হত্যার বিচারের দাবিতে ডিআরইউতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন- দুরন্ত বিপ্লবের মা।
রোকেয়া আক্তার বলেছিলেন, ‘দুরন্তের বন্ধু-বান্ধব, বড়ভাই, ছোট ভাই সবাই তাকে চেনেন। আমি মা হিসেবে তাকে যতটা চিনেছি, তা বর্ণনাতীত। এটা সত্য সে পানিতে ডুবে মরেনি। দুরন্তকে তার সার্কেলের লোকজন, যাদের সঙ্গে চলাফেরা করত, এদের মধ্যেই কারো স্বার্থে আঘাত লেগেছে, সে কারণে তাকে হত্যা করেছে’, দাবি করেন তিনি।
জানা যায়, কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। এর পাঁচদিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। সেই রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
মরদেহ উদ্ধারের পর ১৪ নভেম্বর হত্যা মামলা করা হয়। বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত করতে থাকা ঢাকা জেলা পুলিশ থেকে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা জেলার পিবিআইয়ের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করে ডিবি লালবাগ বিভাগ।
ঘটনার পর দুই সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার। গত ৭ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। দুরন্ত বিপ্লব সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় পানিতে তলিয়ে যান।
বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, বইটি প্রকাশের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ বইটিতে তার নিখোঁজ হওয়ার দিন গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬২ দিনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।