শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার (২৮ মে)। বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ শিল্পীকে ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের পথিকৃৎ ধরা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং শিল্পাচার্য জয়নুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তার নামে ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠা করা হয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা গ্যালারি।
জয়নুল আবেদিনের জন্ম ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহে। ১৯৩৩ সালে কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৮ সালে তিনি আর্ট স্কুল অনুষদে যোগ দেন। ওই বছরই সর্বভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে জলরঙের ছবির জন্য তিনি স্বর্ণপদক পান।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে জয়নুল আবেদিনের স্কেচগুলো ছিল অনবদ্য। এ দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান। সস্তা প্যাকিং পেপারে চায়নিজ ইঙ্ক ও তুলির আঁচড়ে ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’ নামে ছিল জয়নুলের এ ছবিগুলো, যা তাঁকে সারা ভারতে পরিচিত করে তোলে।
গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, মানুষের দুর্দশা, কষ্ট ও সংগ্রামই ছিল জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মের প্রধান উপজীব্য বিষয়। তিনি এঁকেছেন ১৯৪৩ সালের ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ‘নবান্ন’, ১৯৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে লাখো উপকূলবাসীর মৃত্যুতে ‘মনপুরা’র মতো হৃদয়স্পর্শী চিত্র।
শিল্পীর কালজয়ী শিল্পকর্ম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিপুল প্রশংসা ও স্বীকৃতি লাভ করেছে। অসাধারণ শিল্প-মানসিকতা ও কল্পনা শক্তির জন্য তিনি ‘শিল্পাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত হন। তারই উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে ঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ) প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫১ সালে লন্ডনে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার পর জয়নুলের চিত্রে নতুন যে ধারাটি দেখতে পাওয়া যায় তাকে বলা যায়, ‘বাঙালি ধারা’। ‘দুই মহিলা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩), ‘পাইন্যার মা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩) ও ‘মহিলা’ (জলরং, ১৯৫৩) হলো এই সময়ের উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে ভিত্তি করে আঁকা ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারানো হাজারো মানুষের স্মৃতির উদ্দেশে আঁকা ‘মনপুরা’ তাঁর বৈচিত্র্যময় কাজের উদাহরণ।
জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্ম আগামী প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজে নিরন্তর অনুপ্রেরণা যোগাবে। গ্রামবাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য, সাধারণ মানুষের সহজ-সরল জীবনযাত্রা, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও সংগ্রামই ছিল তার চিত্রকর্মের মূল উপজীব্য। তার কর্মে প্রতিভাত হয়েছে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নর-নারীর শ্রম ও সংগ্রাম এবং তাদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।’