২৫ মে ২০২৩, ১০:১৪

দুখু মিয়ার জন্মদিন আজ

দুখু মিয়ার জন্মদিন আজ  © সংগৃহীত

বিদ্রোহী -প্রেম, সাম্য-মানবতার কবি ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মদিন আজ। উপন্যাস, নাটক, সংগীত আর দর্শনেও নজরুলের অনবদ্য উপস্থিতি বর্ণাঢ্য করেছে বাংলা সাহিত্যকে। ধূমকেতুর মতোই ছিল তাঁর আবির্ভাব। বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর অনেক নাম দুখু মিয়া। 

দুঃখের দহনে পোড়া ‘দুখু মিয়া’র জীবন আগের মতো দুঃখেরই থেকে গেছে। জীবিকার প্রয়োজনে এমনকি রুটির দোকানে কাজ করেন। তরুণ বয়সে সেনা সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন যুদ্ধেও। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। করেছেন রাজনীতিও। সাহিত্য চর্চার শুরুটাও বালক বয়সে। নজরুলের জীবন তাঁর সাহিত্যের মতোই চমক লাগানো। 

১৯০৮ সালে কাজী নজরুল ইসলামের পিতা ফকির আহমদ মৃত্যুবরণ করলে তাদের পরিবার আর্থিক অনটন ও কষ্টের মধ্যে পড়ে যায়। গ্রামের স্থানীয় মক্তবে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের প্রয়োজনে নজরুল নিজের মক্তবে শিক্ষকতা ও মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। আল কুরআন, ধর্ম ও দর্শন, ইসলামী জ্ঞান অর্জনে মনোনিবেশের সুযোগ পান তিনি বাল্যকালেই।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল।

১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার সাড়া জাগানো কবিতা সঙ্কলন ‘অগ্নিবীণা।’ কাব্যগ্রন্থটি বাংলা কাব্যের ভুবনে পালাবদল ঘটাতে সক্ষম হয়। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ নিঃশেষ হয়ে যায়। পরে খুব দ্রুত আরও কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ‘বিদ্রোহী’, ‘কামাল পাশা’ ছাড়াও এই কাব্যগ্রন্থের ‘প্রলয়োল্লাাস’, ‘আগমনী’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘শাত-ইল্-আরব’ কবিতাগুলো তুমুল হৈচৈ ফেলে দেয় সর্বত্র। নজরুল গদ্য রচনার বেলায়ও ছিলেন স্বতন্ত্র চিন্তার। তার প্রথম গদ্য ‘বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী’ ১৯১৯ সালে সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। 

নজরুলের সাহিত্যিক জীবনের অবসান ঘটে মাত্র ৪১ বছর বয়সে। এর পর তিনি নির্বাক হয়ে যান। জার্মান দার্শনিক নিৎসে লিখেছিলেন, বীর ও মহাপুরুষেরা যখন সাধারণের চাইতে অনেক ওপরে ওঠেন, তখন তাঁরা এমন কিছু দর্শন করেন, যাকে আর বর্ণনা করা যায় না। তখন তাঁরা বোবা হয়ে যান। কাজী নজরুলের ট্র্যাজিক নীরবতা হয়তো সে রকম কোনো সত্যদর্শনেরই অভিঘাত বা আঘাত। ফুলের জলসায় কবি নীরব, কিন্তু বাংলা কবিতা ও গানে তিনি এখনও কথা বলে চলেছেন।

আরও পড়ুন: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী কাল

তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।

কাজী নজরুল ইসলাম চির প্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কয়জন আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সর্ম্পককে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পড়তে পারেন?