জিআই মর্যাদা পাচ্ছে আরো ৭ দেশী পণ্য
বাংলাদেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে উৎপাদিত ১৮টি পণ্য এ পর্যন্ত জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। এবার বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) সনদ পাচ্ছে দেশীয় জাতের ছাগল ব্ল্যাক বেঙ্গলসহ সাতটি পণ্য। জিআই মর্যাদা পাচ্ছে ৭ পণ্যনতুন করে সনদ পেতে যাওয়া বাকি ছয়টি পণ্য হচ্ছে শীতলপাটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা ও ল্যাংড়া জাতের আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, শেরপুরের তুলসীমালা ধান এবং বগুড়ার দই। এতে পণ্যগুলো রপ্তানি আয়ে বিশেষ সুবিধা পেতে পারে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নীতিমালা অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বাংলাদেশের পণ্যের ক্ষেত্রে এই স্বীকৃতি ও সনদ প্রদান করে। যারা জিআইয়ের জন্য আবেদন করেন, তাঁদের দেওয়া হয় মেধাস্বত্ব। চাইলেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া যায় না। বেশ কিছু প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
আবেদনকারী কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি যে মৌলিকভাবে শুধু বাংলাদেশেই হয়, তার প্রমাণ দিতে হয়। ডিপিডিটির একটি কমিটি তা মূল্যায়ন করে স্বীকৃতি দেয়। এর পর সংস্থাটির জার্নালে তা প্রকাশ করা হয়। যদি কেউ এ পণ্য নিয়ে আপত্তি না তোলে তাহলে সনদ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ডিপিডিটির পরীক্ষক (পেটেন্ট) নীহার রঞ্জন বর্মন বলেন, ‘আশ্বিনা ও ল্যাংড়া জাতের আম জিআই জার্নালে প্রকাশের জন্য এখন বিজি প্রেসে আছে। নাটোরের কাঁচাগোল্লা ও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষ। আমরা এখন জার্নাল তৈরি করছি। তুলসীমালা ধানও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বগুড়ার দই ও শীতলপাটি এই তালিকায় আছে। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে।’
ডিপিডিটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এর পর একে একে স্বীকৃতি পেয়েছে ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি এবং দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল। সর্বশেষ গত মাসে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম এই তালিকায় স্থান পেয়েছে।
আরও পড়ুন: গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে গেল ট্রেন
ডিপিডিটি থেকে জানা গেছে, জিআই মর্যাদা পেতে বগুড়ার দইয়ের জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, বগুড়া জেলা শাখা। শীতলপাটির জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। তুলসীমালা ধানের জন্য আবেদন করেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক। ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। নাটোরের কাঁচাগোল্লার আবেদন করেন সেখানকার জেলা প্রশাসক। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জন্য আবেদন করে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।
সনদের বিষয়ে ডিপিডিটির রেজিস্ট্রার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো একটি পণ্য, বিশেষ এলাকায় যদি উৎপন্ন হয়, বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও গুণ লাভ করে, তাহলে সেটা জিআই সনদ পায়। যেমন— রাজশাহীর ফজলি আম যেখানে যেমন বড় হবে, গাছে যেমন ধরবে, গন্ধ ও মিষ্টি হবে, তা কিন্তু অন্য এলাকার গাছে হবে না। কারণ ওইখানে মাটি, জলবায়ু ও পানির কারণে আলাদা একটা গুণ ওই আমের মধ্যে আছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জিআই সনদ পেলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সুবিধা হয়। সনদ পেলে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যায়। বিদেশিরা জানবে পণ্যটি বাংলাদেশের ওই নির্দিষ্ট এলাকার।