শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ০৮:৪৯ PM , আপডেট: ১৪ মে ২০২৩, ০৯:৩৮ PM
শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে বার্ষিক মোট বাজেটের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করেছে গণসাক্ষরতা অভিযান। রবিবার (১৪ মে) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘শিক্ষা, জেন্ডার সমতা ও নায্যতাভিত্তিক বাজেট: অংশীজনের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই সুপারিশ উঠে এসেছে।
পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে ৫০০ টাকা এবং উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে. এম. এনামুল হক। এডুকেশন ওয়াচের সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধে তিনি বৈশ্বিক প্রবণতার তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের অনুপাত চিত্রায়ণ করেন। দেশের মোট বাজেট এবং জিডিপির অনুপাতে শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয় এতে। আলোচনার মূল কাঠামো নির্ধারণ করা এ নিবন্ধে বাংলাদেশের অর্জনের সাথে সাথে চ্যালেঞ্জ এবং বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর আমাদের দেশে বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ রাখা হয়, কিন্তু গত কয়েক বছরের বাজেটেরও কিছু শিক্ষা আছে। আজকের এই আলোচনা সভাটা আমরা দাবিদাওয়া আদায়ের একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। আমাদের দাবি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাকে কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা শিক্ষায় নায্যতাভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ চাই। শিক্ষার জন্য সরকার যে পরিমাণ ব্যয় করছে তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা ব্যয় করতে হয় পরিবারকে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আরমা দত্ত, এমপি। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
আলোচনা সভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, নাগরিক সমাজ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশত প্রতিনিধি অংশ নেন। এসমত তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি মালেকা বানু বলেন, বাসা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত পৌঁছানো পর্যন্ত নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি কিনা? শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের জন্য যে বিনিয়োগ তা থেকে আউটপুট বেশি আসবে। একইসাথে নারীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় প্রবেশ বাড়াতে হবে। আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্যই হলো সমতাপূর্ণ একটা সমাজ গড়া।
বৃটিশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা উপদেষ্টা শ্যাম কলিন্স বলেন, নারী এবং মেয়ে শিশুদের কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। উন্নয়ন সহযোগীদের এ ব্যাপারে বাড়তি গুরুত্ব দেয়ার উপর জোর দেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি প্রশ্ন রাখেন অন্যান্য বেশকিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করলেও দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজেট এতো কম কেন?
মালালা ফান্ডের দেশ প্রতিনিধি মোশারফ তানসেন বলেন, আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপির ৬ শতাংশ বাজেট শিক্ষা ক্ষেত্রে দেয়ার পরিকল্পনা করছি। কিন্তু হাতে মাত্র ৬-৭ বছর আছে যেখানে আমরা ২ শতাংশের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছি। তাহলে এ অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে ৬ শতাংশ যাব? এ সম্পর্কে আমাদের ভাবার বিষয় আছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, আজকে এখানে যেসব কথা বলা হলো তা আমরা আরও ১০ বছর ধরে বলে আসছি৷ কিন্তু বিশেষ কাজ হচ্ছে না। আন্তজার্তিকভাবে মানদণ্ডে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন আমাদেরকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই ঠিক করতে হবে। আমরা উন্নত দেশের পথে যাচ্ছি কিন্তু শিক্ষার জন্য আমাদের সে ধরনের পরিকল্পনা নাই। মাধ্যমিকের পরিকল্পনা কই? আমাদের একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত তৈরি হয়েছে। একটা সক্ষমতা অর্জন করেছি আমরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আমাদের মেয়েরা যেভাবে এগিয়ে আসছে এটা বিশাল একটা পরিবর্তন। আমাদের সাংঘাতিক একটা কারিকুলাম হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আনন্দ নিয়ে বিকশিত হবে, শৃঙ্খলিত হয়ে বেড়ে উঠবে না। আমারা খুব দ্রুত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক ক্লাব চালু করবো। এবং শিক্ষার্থীদের এসব ক্লাবের সাথে যুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, এটা একটা ওয়ার্কিং গভর্মেন্ট, আর আমরা জনগণের পালস বুঝি। স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা মিড ডে মিল আবারও চালু করার পরিকল্পনা করছি। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের মধ্যে বৈষম্য অনুভব না করে সেজন্য আমরা স্কুলের শিশুদের ইউনিফর্ম দেয়ার পরিকল্পনা করছি। যেনো নিজেদের মধ্যে সমতা অনুভব করে বিকশিত হতে পারে।