বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫-তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
শুক্রবার (১২ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ষষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের (আইওসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের চরম দারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আমাদের মাথাপিছু আয় গত এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলার হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল মানদণ্ড পূরণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসেবে বহু শতাব্দী ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন সামুদ্রিক কার্যকলাপের প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশ সমুদ্র বিষয়ক অনেক আঞ্চলিক প্লাটফর্মে সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশন ও কাউন্সিল অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথোরিটির সভাপতি।
সবাইকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় এই সম্মেলনের ৬ষ্ঠ সংস্করণ আয়োজনে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য আমি ভারত সরকার ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই সম্মেলন অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করার এবং মত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সরকার প্রধান বলেন, সাগর-মহাসাগর দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ পরিচালিত হচ্ছে। সমুদ্রপথে প্রকৃত বাণিজ্য বিগত ১৫ বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এই বিপুল সম্ভাবনা এখনো অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও আফ্রিকার অঞ্চলসমূহে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এ অঞ্চলে বাস করে এবং জিডিপিতে এ অঞ্চলের অবদান ৬০ শতাংশ। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, এ অঞ্চলটি নানাবিধ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শান্তি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য সর্বদা সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে ১৯৭৪ সালে তিনি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এবং এ সীমার মধ্যে সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়ন করেন। যা ‘সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশন, ১৯৮২’ ঘোষণার আট বছর আগে কার্যকর করা হয়েছিল, যখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে সীমিত ধারণা ছিল।
এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শাস্তি, অংশীদারিত্ব ও সমৃদ্ধি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যথাযথ হয়েছে। টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে অংশীদারিত্ব, শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যার প্রেক্ষাপটে আজকের এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে—বলেন প্রধানমন্ত্রী।