‘মোখা’ ঘূর্ণিঝড়ের নাম কীভাবে হলো?
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত গভীর নিম্নচাপটি ভোর ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ১মোখা’য় রূপ নিয়েছে। এটি কক্সবাজার থেকে ১২২০, পায়রা থেকে ১২২৫, মোংলা থেকে ১২৬৫ ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে ‘মোখা’। এটি সুপার সাইক্লোনেও রূপ নিতে পারে। বর্তমানে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অধিদফতর ৪ সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে। একই সঙ্গে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়াসহ ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, মোখা সুপারসাইক্লোনে রূপ নিতে পারে। এবার এ ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোখা’। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রবল গতি নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।
তবে কীভাবে এর নাম ‘মোখা’ হলো, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে অনেকের। প্রশ্ন হলো, ঝড়ের এ নাম হলো কেন?
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের ১০ নির্দেশনা
পূর্বে শুধু আমাদের দেশ নয় কোন দেশেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম থাকতো না। আমাদের দেশে ১৯৭০ সালে কিংবা ১৯৯১ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো নাম নেই। শুধু আমাদের দেশের নয়, অন্যান্য দেশে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়েরও কোনো নাম থাকত না। একপর্যায়ে এসব ঘূর্ণিঝড়েরর নাম রাখা শুরু হয়। কারণ, নামবিহীন থাকলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত জানা যায় না। এর আঘাত হানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের।
আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও ) সে জন্য পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করেছে। আরএসএমসি তার সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়ে থাকে। তালিকা পেলে দীর্ঘ সময় যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠায়।
উত্তর ভারত মহাসাগর তথা বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে এ অঞ্চলের ১৩টি দেশ। ডব্লিউএমও’র প্যানেল সদস্য দেশগুলো ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে নামগুলো গ্রহণ করে।
দেশগুলো হলো: বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন। এ দেশগুলোর নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী তৈরি তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ হয়।
সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা হয়। যেমন ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী এই ১৩ দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে থাকে বাংলাদেশের নাম। আর শেষে থাকে ইয়েমেনের নাম। এবার মোখা শব্দটি ইয়েমেন থেকে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কখন কোথায় আঘাত হানবে, যা বলছেন বিশেষজ্ঞ
মোখা ইয়েমেনের একটি বন্দর শহরের নাম। ইয়েমেনের লোহিত সাগর উপকূলের শহর এটি। ঊনবিংশ শতকে ইয়েমেনের প্রধান বন্দরে পরিণত হয় মোখা। শহরটি কফির বাণিজ্যের জন্য সুপরিচিত। মোখা নামে একটি কফিরও নাম আছে। সেই পঞ্চদশ শতক থেকে কফির বড় বাজার ছিল মোখা। এর সুখ্যাতি এখনো আছে।
এরপরই আসবে বাংলাদেশের দেওয়া নাম। তালিকা অনুযায়ী পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘বিপর্যয়’। এর পরবর্তী পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে যথাক্রমে তেজ (ভারত), হামুন (ইরান), মিধিলি (মালদ্বীপ), মিগজাউম (মিয়ানমার) ও রিমাল (ওমান)।