২০০ কিমি বেগে আঘাত হানতে পারে মোখা, জানা গেল স্থান
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার আশংকা করছেন আবহাওয়াবিদরা। কানাডার সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ এ তথ্য জানিয়েছেন।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, সারাদিন বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন অংশের সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানির গভীরতা, উ-লম্ব বায়ু শিয়ারের মান, ভারত উপমহাদেশের উপর জেটষ্ট্রিমের অবস্থা ও চলার গতির তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছি। এরপরে সেই বিশ্লেষণের সাথে বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস এর সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছি।
এ তথ্য ও আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাসের আলোকে তার আশংকা, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা আগামী রোববার (১৪ মে) সকাল ৬ টার পর থেকে ১৫ মে সকাল ৬টার মধ্যে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মায়ানমারে রাখাই রাজ্যের মং-ডু জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করবে।
স্থল ভাগে আঘাতের স্থানটি নিয়ে এখনও সামান্য অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে যার কারণে ঘূর্ণিঝড়টি মায়ানমারের দিকে কিংবা বরিশাল বিভাগের দিকে সামান্য পরিমাণ ঝুঁকে পড়তে পারে। অর্থাৎ, ঘূর্ণিঝড়টির চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে অতিক্রম করার কিছু সম্ভাবনা রয়েছে। একি ভাবে ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা ডান দিকে সরে গিয়ে কক্সবাজার ও মায়ানমারে রাখাই রাজ্যের মং-ডু জেলার উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার কিছু সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা (সম্ভব্য) যে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে পূর্ব বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত করতে যাচ্ছে এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সংকলন/সমষ্টিগত আবহাওয়া পূর্বাভাসের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছি। এ ঘূর্ণিঝড়টি যে খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হবে সেই আশংকার কথা আমি ২৬ এপ্রিল থেকে প্রচারিত প্রত্যেকটি আপডেট এর মাধ্যমে মনে করিয়ে দিয়েছি।
উল্লেখিত গতিবেগে ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় এ দুই জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলো ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আমি আশংকা করছি যে, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্র কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টি দ্বীপ, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, ও মহেশখালী উপজেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার। ঘূর্ণিঝড় মোখা (সম্ভব্য) টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর ওপর দিয়ে অতিক্রম করার আশংকা প্রবল।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোর ওপর ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার আশংকা করছি। খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার; ঢাকা ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টির হওয়ার আশংকা করছি।