মুক্তি রানী হত্যা: প্রতিবাদে শাহবাগে সাংস্কৃতিক সমাবেশ উদীচীর
নেত্রকোনার বারহাট্টায় দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী বর্মণকে (১৬) কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িত মো. কাওসার মিয়াকে দ্রুত শাস্তির আওয়ায় আনতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিকেলে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুক্তি চত্বরে এ সমাবেশ করে সংগঠনটি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মুক্তি রানীর হত্যার জন্য যে কারণ দায়ী, সেই একই কারণেই খুন হতে হয়েছে নুসরাত, তনুদেরকে। বিগত এক বছরে তিন হাজারেরও বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এতোদিন পর্যন্ত শুধু নারীরাই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কিন্তু সমাজ যদি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে তাহলে কোনো লাভ হবে না।
তারা বলেন, ২০০৯ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতন বিরোধী সেল গঠন করার। আজ ২০২৩ এ এসে সেই সেল বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এতোদিন কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, নারী পুরুষের সম্পদ, অবস্থানের যে অসমতা, সেটিই নারীর প্রতি নির্যাতন উসকে দেয়। যার ফলশ্রুতিতে এমন নির্মম ঘটনার সাক্ষী হতে হয় আমাদেরকে। তাই, আমরা মুক্তির খুনীদের শাস্তি দাবি করছি। যেন এই শাস্তিটা একটা দৃষ্টান্ত হতে পারে।
এ সময় উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জণ দে বলেন, যে মেয়েটি গত ১ মে পর্যন্ত নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে কথা বলেছে সে-ই গত ২ মে হত্যার শিকার হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন এই কাউছার কিভাবে খুনীতে রূপান্তরিত হলো? এই কাউছার গত এক বছর ধরে মুক্তি রানী ও তার বড় বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। পরে তার বড় বোন শহরে চলে আসলে মুক্তি রানীকে হত্যা করে৷
তিনি বলেন, আমরা জানি না খুনী কাউছারের বিচার হবে কি-না? কারণ, এই রাষ্ট্রের চরিত্রই হলো ক্ষমতাবানরা যা-ই করুক না কেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয় না। সাধারণ মানুষরা কিছু করলেই সরকার ঝুঁকে পড়ে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য; কিন্তু, প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে কেউ কিছুই করতে পারে না। প্রতিবছর ৩ হাজারের অধিক নারী বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু এসব তো শুধু পত্রিকা বা খবরের নিউজে আসার খবর। অজানা থাকে আরো কয়েকগুণ।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সামনে কোন ঘটনা ঘটলে আমরা চুপ থাকি। প্রতিবাদ শুধু করে ভুক্তভোগী অল্প কয়েকজন মানুষ। ফলে অপরাধ কমার চেয়ে বাড়ছে অনেক বেশি। এসবের কারণ হলো সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে বাধা। এই সংস্কৃতির বাধার ফলে আমরা মানবিক মানুষে পরিণত হয়ে উঠতে পারবো না। সুস্থ সংস্কৃতির অভাবেই আজকে শত শত কাউছার বাংলার মাটিতে জন্ম নিয়েছে। এজন্য আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, আমি যখন মুক্তিকে হত্যার লেখাটা পড়লাম আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। তাৎক্ষণিক আমার মাথা কাজ করছিলো না এমন নৃশংস ঘটনা দেখে। পরে আমরা রাতেই এর প্রতিবাদ জানাই এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করি। আমরা মরতে জানি না রূখে দাড়াতে জানি। আমরা প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো। পরিশেষে আমি খুনী কাউছারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
উদীচী এ সাংস্কৃতিক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি ডাঃ ফাওজিয়া মুসলেম, উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মাহমুদ সেলিম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নারী সেলের সদস্য রুনা নূর, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আকরামুল হক, কেন্দ্রীয় খেলাঘরের সভাপতি মাহফুজা খানম, উদীচীর সঙ্গীতশিল্পী সুরাইয়া পারভীন প্রমুখ।