যে অভিযোগে চাকরিচ্যুত হলেন মানবিক পুলিশ শওকত

শওকত
শওকত  © ফাইল ফটো

চাকরিচ্যুত করা হয়েছে মানবিক পুলিশের খ্যাতি পাওয়া চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কনস্টেবল শওকত হোসেনকে। গত ১৬ এপ্রিল তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ওইদিন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা স্বাক্ষরিত এক আদেশে শওকতকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

চাকরিচ্যুতির আদেশের কপিতে অভিযোগ লেখা হয়েছে, কর্ণফুলী থানায় দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেন ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দামপাড়া বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ওই বছরের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি হাসপাতাল ভর্তি ছিলেন। এরপর চিকিৎসক এক সপ্তাহের পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেন। কিন্তু ওই বছরের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭১ দিন তিনি থানায় গরহাজির ছিলেন। ২১ জানুয়ারি তিনি গরহাজির থাকার কৈফিয়তসহ থানায় হাজির হন।

এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। সেই মামলার তদন্ত পর্যায়ে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লিখিত জবাব দেন শওকত হোসেন। সেখানে তিনি ‘বেওয়ারিশ মানুষদের নিয়া মানবিক কার্যক্রমের সহিত সম্পৃক্ত থাকার কারণে পুলিশ কনস্টেবলস পদে চাকরি করা সম্ভব নয়’ মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন।

শওকত হোসেনের এমন বক্তব্যের পর ১৬ এপ্রিল সিএমপির উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন। আদেশে লেখা হয়, ‘অভিযুক্তের কৃত অপরাধের শাস্তিস্বরূপ গুরুদণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ পদের চাকরি হইতে ডিসমিসের (বরখাস্ত) আদেশ প্রদান করা হইল।’

জানা গেছে, শওকত হোসেনের বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায়। তিনি ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন। 

২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষদের সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন। তার এই কাজগুলো ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল।

তবে ২০২১ সালে একটি মাফফিলে অতিথি হয়ে যান এবং ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্যের জেরে পরবর্তী সময়ে তাকে দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে বদলি করে কর্ণফুলী থানায় পাঠানো হয়। সবশেষ তাকে চাকরি থেকেই বরখাস্ত করা হলো।

এ বিষয়ে সিএমপির উপকমিশনার (সদর) মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারীশ গণমাধ্যমকে বলেন, কনস্টেবল শওকত হোসেনের চাকরিচ্যুত আদেশ হয়েছে। এখন তিনি (শওকত) চাইলে সিএমপি কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারেন। এরপরও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ