দলকে আরও একবার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি আহবান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার দলকে আরও একবার সুযোগ দেওয়ার জন্য আজ দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি দেশবাসীকে স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি দুর্নীতিবাজরা আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা দেশের সব উন্নয়নকে ধ্বংস করে দিবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ, তারা বারবার আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আগামী সাধারণ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। আমি আশা করি জনগণ বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার আরেকটি সুযোগ দিবে কারণ, দেশটি ২০২৬ সাল থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। এ লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
আজ শনিবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঈদ-উল-ফিতরের পবিত্র দিনে আপনার সাথে দেখা করে আমি সত্যিই খুব আনন্দ বোধ করছি কারণ, আপনারা আমার কাছের প্রিয়জন এবং আত্মার আত্মীয়। তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ রাতে বাবা-মা এবং ভাইদের হারানোর পর তিনি এদেশের জনগনের ভালোবাসা ও স্নেহ পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় এবং স্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এত বড় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির সাক্ষী হয়ে রয়েছে, কারণ জনগণ ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরপর আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে বারবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানোর জন্য এবং তাদের সেবা করার সুযোগ দেয়ায় আমি মহান আল্লাহ ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
শেখ হাসিনা দেশ ও দেশের জনগণকে মায়ের মতো ভালোবাসেন উল্লেখ করে বলেন, তিনি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে সব মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করে সুন্দর ও উন্নত জীবন দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কারণ এটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজ ও গ্রেনেড হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান কারণ, তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, খুনি, গ্রেনেড হামলাকারী ও দুর্নীতিবাজরা আবার ক্ষমতায় গেলে দেশ ও এর সব অগ্রযাত্রা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত চক্রের জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেন এবং বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ সকল মানুষকে তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, যারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে, তারা সবকিছুই করতে পারে। তিনি সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, আওয়ামী লীগ জনগণের সেবক কারণ এই দলটি সর্বদা জনগণের সেবা করে।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে আমি গর্বিত। প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে কিছুই নয়। তিনি ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার উপায় হিসেবে বিবেচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, বিশেষকরে পদ্মা সেতুসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে এবারের ঈদযাত্রা সহজ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
তিনি তাদের কাছের ও প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নিজ গ্রামে যাওয়া লোকজনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তার সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেওয়ায় মানুষ এখন গ্রামে গ্রামে আনন্দ উপভোগ করছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি তার দলের নেতাকর্মীদেরও জনগণের প্রয়োজনে পাশে থাকার আহবান জানান।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যাতে কোনো সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের প্রতিটি আবাদি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে হবে এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য অন্য দেশে রপ্তানি করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশে সবজি রপ্তানি শুরু করেছি।
প্রধানমন্ত্রী প্রথমে তার দলের নেতাকর্মী এবং কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তিনি মন্ত্রিপরিষদের সহকর্মী, বিচারক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি কূটনীতিক, সিনিয়র সচিব,সচিব এবং সচিবের সমান পদমর্যাদার বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।