স্বপ্ন পূরণে ঈদ আনন্দ বির্সজন ভর্তিচ্ছু-চাকরিপ্রার্থীদের
আসন্ন ঈদের পর শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ। ভর্তিচ্ছুদের এখন সময় শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। ঢাকায় বসে ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাইফ হাসান। স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ। রোজার শেষে সবাই যখন ঈদ উদযাপনে পরিবারের কাছে ছুটছেন সাইফ তখন ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের ভর্তি প্রস্তুতিতে।
তিনি জানান, কোচিং ছুটি হবে ২০ তারিখ এবং পুনরায় ক্লাস শুরু হবে ২৫ তারিখ। এইসময়ে বাড়িতে যাওয়া আসায় যেমন খরচ, ভোগান্তি দুইই হবে তেমনি পড়ালেখার প্রতিও মনোযোগ নষ্ট হবে। তাই এবারের ঈদে বাড়ি যাবেন না তিনি।
তথ্যমতে, দিন দিন আরও কঠিন হচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের এই পথ । কারণ বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায় একটি আসনের বিপরীতে প্রায় ৫০-১৫০ জন প্রতিযোগিতা করে। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো না থাকলে টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্রতিযোগী বেশি থাকায় ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে টিকে থাকতে পারে না।
সাইফ বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর পড়ালেখার সুযোগ পান নি। যখন থেকে একটু বড় হয়েছি তখন থেকেই তাই লক্ষ্য ছিলো একদিন বাবার এই আক্ষেপ পূরণ করবো। উচ্চ মাধ্যমিকে এ প্লাস পেয়েছি, বাবার স্বপ্ন পূরণে এখন আর এক ধাপ বাকি। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। পরিবারের সাথে ঈদ করার সুযোগ হয়ত আরো পাবো কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগতো আর পাবো না।
সাইফের মত একই কারণে এবছরে পরিবার ছাড়াই ঈদ উদযাপন করবেন আরও অনেকেই। তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকারী নীলফামারির শাহরিয়ার হিমেল বলেন, ছোটবেলা থেকে পরিবারের সাথেই সবসময় ঈদ করেছি। নতুন পাঞ্জাবি পড়ে বাবা-মাকে সালাম করা তারপর বাবা আর ছোট ভাইয়ের সাথে নামাজে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানো এসবের আনন্দই অন্যরকম। কিন্তু এবারে আর কোনো কিছুরই সুযোগ হবে না। কোচিং থেকে যে ছুটি দিয়েছে তা যাতায়াতেই শেষ হয়ে যাবে তাই বাবা-মা যেতে নিষেধ করেছেন। ঈদটা এক আত্মীয়ের বাসায় কাটাবো।
বরিশালের সানজিদা ইসলাম বলেন, ঢাকায় ফুফুর বাসায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করছি। কোচিংয়ে মাত্র চারদিন ছুটি থাকায় বাড়ি যাওয়া হবে না। তবে মা আর ছোট ভাইয়ের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। তারা আসলে বাড়ি যেতে না পারার দুঃখ কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে যে আনন্দটা থাকে এবছরে সেটি আর হবে না।
শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরাই নন ৪৫তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন না চাকরিপ্রত্যাশীদেরও একটি বড় অংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান বলেন, এবারে তৃতীয়বারের মত বিসিএসে অংশগ্রহণ করেছি। বন্ধুরা সবাই যখন বিভিন্ন বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করেছে তখন আমি পুরোটা সময় প্রস্তুতিতে ব্যায় করেছি। এবারের প্রিলিমিনারিতেও যদি ব্যর্থ হই তবে পরিবারের সামনে আর দাঁড়াতে পারবো না। তাই আমার কাছে এইমুহুর্তে ঈদের আনন্দের তুলনায় পরীক্ষার প্রস্তুতি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
রওনক জাহান নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাড়ি সুনামগঞ্জে। চাকরির পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। ঢাকায় যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি তারা মাত্র তিনদিনের ছুটি দিয়েছে। তাছাড়া ৪৫তম বিসিএসও ১৯ মে। তাই এইমুহুর্তে বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবছি না।
উল্লেখ্য, আগামী ২৯ এপ্রিল চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা। এরপর ৬ মে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট, ১২ মে বিজ্ঞান ইউনিট এবং ১৩ মে অনুষ্ঠিত হবে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এছাড়া, আগামী ১৯ মে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি।