বেতন ছাড়াই শিক্ষকতা, চার বছর ধরে নতুন জামা কেনা হয়নি সজীবের
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভুল চাহিদার কারণে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে বেতন ছাড়াই চাকরি করছেন চার বছর ধরে। মা-বাবা অসুস্থ হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। এমনকি গত চার বছরে একটিও নতুন জামা কিনতে পারেননি তিনি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। তবে তাকে বাদ দেওয়ার পায়তারা চলছে। এই অবস্থায় মানসিবভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
বলা হচ্ছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর রমজানপুরের আনারননেছা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সজিবুর রহমান সজীবের কথা।
শুধু সজীবই নন; প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির পর পাঁচজন শিক্ষককে চাকরি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস নেওয়ার উপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
যদিও এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। তাদের দাবি, যারা অভিযোগ করেছেন তারা নিয়মিত পাঠদান করতেন না। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। সে কারণে তাদের বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সজীবের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এনটিআরসিএ’র দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমপিও পদে আবেদন করেন। আবেদনের সময় আনারননেছা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের বাংলা (সহকারী শিক্ষক) পদটি এমপিও দেখায়। সেজন্য তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেন এবং সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
২০১৯ সালে ওই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন তিনি। যোগদানের পর জানতে পারেন প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত নয়। এরপর অধ্যক্ষের আশ্বাসে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা করেন। ২০২২ সালের ৬ জুন প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলে প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি স্থানীয় সংসদ এবং তার স্ত্রীর কারণে এমপিওভুক্তির কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ সজীবের। এমপিওভুক্তির কাগজপত্রে গভর্নিং বডির সভাপতির স্বাক্ষর না থাকায় এমপিওর আবেদনই করতে পারছেন না তিনি।
সজীব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দীর্ঘ চার বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছি। এখন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির পর আমাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি আমার সাথে চরম অন্যায়। আমি বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে সবগুলো অধিদপ্তরে জানিয়েছি। আমার দাবি যৌক্তিক হওয়ার সব জায়গা থেকে আমার পক্ষে মত দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে অজানা কারণে তা এখনো সমাধান হয়নি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যার কথা আপনি বলছেন তার বিষয়টি অনেক জটিল। আমি গত এক মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। এই বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারবো না। আপনি গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতির সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ও মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান গোলাপের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সার্বিক বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পিআইডব্লিউ) এ ওয়াই এম জিয়াউদ্দীন আল-মামুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষকের বিষয়টি আমরা জানি। তার বিষয়ে অধিদপ্তর স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করতে পারে না। প্রতিষ্ঠান প্রধান আমাদের কাছে বকেয়া বেতনের বিষয়ে আবেদন করলে আমরা বিষয়টি সমাধান করে দেব। তবে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এখনো এমন কোনো আবেদন আমাদের কাছে আসেনি।