১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৫

‘রক্ত বেচার ঘোষণা’ দিয়ে ভাইরাল ব্যবসায়ী পেলেন ৫ লাখ টাকা

ক্ষতিগ্রস্ত সেই ব্যবসায়ীকে ৫ লক্ষ টাকা দিলেন ফারাজ করিম চৌধুরী  © সংগৃহীত

যেখানেই মানবিক বিপর্যয় ঘটে, সেখানেই আশার আলো হয়ে হাজির চট্টগ্রামের মানবিক তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরী। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়া ব্যবসায়িদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এবার নিউ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন ব্যবসায়ীকে নগদ ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন ফারাজ করিম। এ সময় দোকানের শিশু কর্মচারী মো. নাহিদকে নতুন জামা-কাপড় ও কিনে দেন তিনি। 

শনিবার  (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৫ টার দিকে ঢাকার নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম রোকন নামে একজন ব্যবসায়ীর নিউ সুপার মার্কেটের ৩য় তলার ‘নোঙ্গর’ নামে ২৯০ নং দোকানটি আগুনে পুড়ে যায়। ওই ব্যবসায়ির প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে যায়। 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর কর্মচারীকে নিজের রক্ত বিক্রি করে বেতন দিবেন বলে একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়। তা দেখে এই মানুষটিকে সহযোগিতা করার জন্য সনাক্ত করার বিষয়ে নিজের ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দেন ফারাজ করিম চৌধুরী।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৯ টা ৪৩ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় তিনি সেই ব্যবসায়ীর নিজ বাসায় গিয়ে হাতে টাকা তুলে দেন। এ সময় ফারাজ করিম চৌধুরী বলেন, ‘আপনি সৎভাবে ব্যবস্যা করেছেন, আপনার ঈমানী শক্তি আছে, আমি আপনাকে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিচ্ছি। আপনি আবার ঘুরে দাঁড়ান।’

টাকা গ্রহণের সময় ওই ব্যবসায়ী কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফারাজ করিম চৌধুরী প্রকাশিত ভিডিওর মন্তব্যে লিখেছেন, ‘মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হালাল পথে রোজগার করার চেষ্টা করা এই পৃথিবীর বর্তমান প্রেক্ষাপটে রক্ত দেওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আপনার কর্মচারীর পাশে দাঁড়ানোর সৎ সাহস দেখে বাংলার মানুষ অনুমান করতে পারে যে আপনার ভিতর ঈমানী শক্তি রয়েছে। এমন মানুষের পাশে আমরা সবসময় থাকবো ইন শা আল্লাহ।’

এর আগে, অই দোকানের শিশু কর্মচারী মো. নাহিদ বলেন একটি ভিডিওতে বলেন, ‘এখনও বেতন-বোনাস পাইনি। আমার মালিক বলেছে, রক্ত বিক্রি করে হলেও আমাদের ঈদের বেতন-বোনাস দেবেন।’ আগুন লাগার কথা শোনার পর দোকানের মালামাল বাঁচাতে ঘণ্টাখানেক আগে আমি ভেতরের গলি দিয়ে দোকানে যাই। সেখানে যাওয়ার পর দেখি সবকিছু আগুনে পুড়ে লাল হয়ে গেছে। কোনো কিছু বাঁচাতে পারিনি। সব পুড়ে গেছে। 

নাহিদ বলেন, ধোঁয়ার কারণে এক সময় আমার বেহুঁশ হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। আমার দোকানের মালিক আমাকে বের করে আনছে।

তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ করিম চৌধুরী শুধু অই ব্যবসায়ীকেই সহযোগিতা করেন নি। শিশু কর্মচারী মো. নাহিদকে নতুন জামা-কাপড় ও কিনে দেন। এরপর  নিজের ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাস দেন তিনি সেখানে লেখেন, মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেও যার অশ্রুভেজা চোখমুখ দেখে দেশের মানুষ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল, ঠিক সেই ছেলেটির মুখে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে হাসি ফোঁটানোর চেষ্টা করলাম।

সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আকারে প্রায় ২ কোটি টাকা সহযোগিতা করে দেশব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন মানবিক এই তরুণ। করোনার কঠিন সময়ে, বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ও সিলেট-কুড়িগ্রামের ভয়াবহ বন্যাসহ দেশের মানুষের ক্রান্তিলগ্নে জীবন বাজি রেখে ছুটে চলা এক স্বপ্নবাজ যুবকের নাম ফারাজ করিম চৌধুরী।

ইতোপূর্বে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার অসহায় মানুষের পাশেও ছিলেন। শুধু কী তাই। দেশের ভেতরে বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে স্ব উদ্যোগেই হাজির ছিলেন সব সময়।