যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনও দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
আমেরিকা চাইলে যেকোনও দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে। তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের কিছু বুদ্ধিজীবিদের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাবেদারি করে। পদলেহন করে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আনা ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাব ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের বড় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত না দেওয়া ও জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি খবরসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয়। আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোদন করছেন, উঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যেকোনও দেশের ক্ষমতা ওল্টাতে পারেন, পাল্টাতে পারেন। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো তো আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। আরব স্প্রিং (আরব বসন্ত), ডেমোক্রেসি সব বলে বলে যেসব ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে— এখন নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটা প্যাঁচে পড়ে গেছে। যতদিন ইসলামিক কান্ট্রিগুলোর ওপর চলছিল, ততদিন কিছু হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এখন সারা বিশ্বই আজকে অর্থনতিক মন্দার কবলে পড়ে গেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, অস্ত্র নিয়ে স্কুলে ঢুকে যায়। বাচ্চাদের গুলি করে হত্যা করছে। শিক্ষকদের হত্যা করছে। শপিং মলে ঢুকে যাচ্ছে। হত্যা করছে। ক্লবে যাচ্ছে সেখানে হত্যা করছে। এটা প্রতিনিয়ত, প্রতি দিনেরই ব্যাপার। কোনও না কোনও রাজ্যে অনবরত এই ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে যারা হত্যা করেছে, সেই খুনি রাশেদ (রাশেদ চৌধুরী) আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। সেখানে যতটা প্রেসিডেন্ট এসেছে, সবার কাছে আমি আবেদন করেছি। আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি যে, এদেরকে আপনারা আশ্রয় দিয়েন না। ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না।
আরও পড়ুন: পরিবারের খরচ মেটাতে ক্যাম্পাসে ব্যবসা করছেন রাবির শফি
প্রথম আলো প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, মাত্র একটা ছোট্ট শিশুর হাতে ১০টা টাকা দিয়ে একটা মিথ্যা বলানো। শিশুর মুখ থেকে কিছু কথা বলানো। কী কথা! ভাত-মাছ-মাংসের স্বাধীনতা চাই। একটা সাত বছরের শিশু। তার হাতে ১০টা টাকা তুলে দেওয়া এবং তার কথা রেকর্ড করে সেটা প্রচার করে স্বনামধন্য এক পত্রিকা খুবই পপুলার, নাম তার প্রথম আলো। কিন্তু বাস করে অন্ধকারে। প্রথম আলো আওয়ামী লীগের শত্রু। প্রথম আলো গণতন্ত্রের শত্রু। প্রথম আলো দেশের মানুষের শত্রু।
৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনীর দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অনেকেরেই আপত্তি। যারা এই আপত্তির কথা তুলছেন, তাদের বোধহয় অভিজ্ঞতার অভাব আছে। এই ৭০ অনুচ্ছেদটাই কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের একটা স্থায়ীত্বের সুযোগ এনে দিয়েছে। যার ফলে দেশটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। জানি না, কেন কিছু কিছু সদস্য এর ওপর এত রাগ। কারণ হচ্ছে, সরকার ভাঙতে-গড়তে বা খেলাটা খেলতে তারা সক্ষম হচ্ছে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে তো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। যে বিরোধী দলকে বড় বিরোধী দল বলা হয়, তারা ২০০৮ সালে ২৯টি সিট পেয়েছিল। তারা যদি এত বড়ই বিরোধী দল হয়ে থাকে, তাহলে ২৯টি সিট পেলো কেন? তারা এতবড় দল কোত্থেকে হয়ে গেলো। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।