পথশিশুদের ৪৮ শতাংশই ঢাকা বিভাগে
দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশুর অবস্থান ঢাকা বিভাগে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ পথশিশু রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর পথশিশু জরিপ ২০২২-এ এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে জানানো হয়, প্রায় চার ভাগের একভাগ পথশিশু ধূমপান করে এবং ১২ শতাংশ মাদকের নেশায় আসক্ত। ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারে ফিরে যেতে চায় না।
আজ সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে পথশিশু জরিপ-২০২২ এর ফলাফল প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
সম্মানিত অতিথি ইউনিসেফ বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েটের উপস্থিতিতে জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিবিএসের উপমহাপরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম। পথশিশু জরিপ প্রতিবেদন ২০২২ -এর ফলাফল তুলে ধরেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইং-এর পরিচালক মো. মাসুদ আলম।
মো. মাসুদ আলম প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান, যথাযথ জরিপ পদ্ধতি অনুসরণ করে সারাদেশে প্রথম পর্যায়ে শূন্য থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের ওপর কুইক কাউন্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্যাম্পলিং ফ্রেম প্রণয়ন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭ হাজার ২০০ পথশিশুদের ওপর পথশিশু জরিপ-২০২২ পরিচালিত হয়। দেশের আট বিভাগে এই জরিপ পরিচালিত হয়।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ পথশিশু অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ পথশিশু রয়েছে। পথশিশুদের মধ্যে ৮২ শতাংশ ছেলে এবং ১৮ শতাংশ মেয়েশিশু রয়েছে। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী পথশিশু রয়েছে ৫৪ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনে মেয়েদের তুলনায় ছেলে পথশিশুর সংখ্যা অনেক বেশি, একজন মেয়ের বিপরীতে চার জন ছেলেশিশু। পথশিশুদের গড় বয়স ১২ দশমিক ৩ বছর।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, পথশিশুদের সর্ব্বোচ্চ ২০ দশমিক ৪ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগ এবং সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৯ শতাংশ সিলেট বিভাগের জেলাগুলো থেকে এসেছে। এক্ষেত্রে পথশিশুর নিজ জেলা ময়মনসিংহ সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বরিশাল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ভোলা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, কুমিল্লা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, কিশোরগঞ্জ ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং কক্সবাজার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্রধানত ৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ পথশিশু দারিদ্রতা, ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ বাবা-মা শহরে আসার কারণে এবং ১২ দশমিক ১ শতাংশ কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে শহরে এসেছে। প্রতি পথশিশুর ৫ জনের ২ জনই একা একা শহরে এসেছে। ১০ জন পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। সব পথশিশুর মধ্যে কেবল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। খুব নগণ্য সংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পথশিশুদের বিষয়ে হালনাগাদ সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে এনেছে। এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এখন পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে এ ধরনের জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে তিনি এ ধরনের জরিপ পরিচালনার জন্য বিবিএস ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান।
বিবিএস মহাপরিচালক বলেন, বিবিএস সব সময় জাতির প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান প্রস্তুতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম বিবিএসের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। নিয়মিত বিভিন্ন শুমারির পাশাপাশি এ ধরনের চাহিদাভিত্তিক জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিবিএস সবসময় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী। তিনি এ সময় বিবিএসকে আন্তর্জাতিক মানের একটি জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে ইউনিসেফসহ সকল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।
জরিপ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. দিপংকর রায়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, গবেষক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবিসহ বিভিন্ন অংশীজন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।