দুই দফা দাবিতে সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের সমাবেশ
দেশের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন। কর্মসূচিতে সারাদেশের সরকারি কলেজে কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
সোমবার (১০ এপ্রিল) সকাল দশটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসব কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এতে অংশ নেওয়া কর্মচারীরা বলেন, সারাদেশে প্রায় ৩৩২টি সরকারি কলেজ ও ৩টি সরকারি মাদ্রাসায় অসংখ্য বেসরকারি কর্মচারীরা ১০-২৫ বছর বা তারও বেশি ধরে কাজ করছেন। এরা সবাই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্তমানে এসব কর্মচারীদের মাসিক বেতন ৫-১০ হাজার টাকা। এই অল্প বেতনে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে দ্রব্যমূল্যের অতি ঊর্ধ্বগতির বাজারে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছি।
সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের ঢাকা বিভাগের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, চাকরি জাতীয়করণ করা হবে এমন আশ্বাস আমরা বারবার পেয়েছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ২০১৩ ও ২০২০ সালে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু বেসরকারি কর্মচারীদের কোন অগ্রাধিকার দেয়নি।
সেই বিজ্ঞপ্তিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের একটি রিট মামলার নির্দেশনা মোতাবেক বেসরকারি কর্মচারীদের অগ্রাধিকার থাকলেও মাউশি কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশ মানেননি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি কলেজগুলোতে মাত্র শতকরা ৫ জন কর্মচরী সরকারিভাবে কর্মরত আছে। আর বাকি ৯৫ শতাংশ কর্মচরী বেসরকারিভাবে কর্মরত আছে। আমরা চাকুরী স্থায়ী করার আবেদন জানাই। এর আগেও এই দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৮দিন পর্যন্ত সকল সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। তবে বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আর ঘরে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের এবারের দাবী মেনে নিতেই হবে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. দুলাল সরদার বলেন, আমাদের চাকরি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও মহাপরিচালক কে আমরা একাধিক বার স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। আমরা ১০-২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের সন্তানের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে নিজের বুকে ধারণ করেছি। সেকারণে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন আপনার সুদৃষ্টি ছাড়া আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আসবে না এবং আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের অগ্রাধিকারের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে সাধারণ কর্মচারীদের বেচে থাকার পথ বের করে দিতে হবে।
এসময় তারা দুই দফা দাবিও তুলে ধরেন।
১। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেসরকারি কর্মচারীদেরকে নিয়োগের তারিখ থেকে চাকরি সরকারীকরণ করতে হবে।
২। চাকরি সরকারীকরণের পূর্ব পর্যন্ত সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতনভাতাদি প্রদান করতে হবে।
এসব দাবি মেনে না নিলে রোজার পরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনশন, কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান তারা।
উল্লেখ্য, পূর্বঘোষনা অনুযায়ী সমাবেশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য অধিদপ্তর অভিমুখে কর্মচারীরা রওনা হলেও পুলিশের বাঁধার কারণে প্রেসক্লাব পার হতে পারেননি।