বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

‘দোকানের চাবিটা ছাড়া আর কিছুই নাই, রাস্তার ফকির হয়ে গেছি ভাই’ 

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া ব্যবসায়ীদের চোখের পানি থামছেনা।
বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া ব্যবসায়ীদের চোখের পানি থামছেনা।  © টিডিসি ফটো

বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া ব্যবসায়ীদের চোখের পানি থামছেইনা। তাঁরা বলছেন, এত বড় দুর্ঘটনা কল্পনাতেও ভাবতে পারছেননা।সারাজীবনের কষ্টার্জিত অর্থের যোগানে যেসব দোকান গড়ে তুলেছিলেন সেসবকিছুই চোখের সামনে হারিয়ে পাগলপ্রায় সবাই। নির্বাক হয়ে পোড়া দোকানের সামনেই বসে থাকতে দেখা যায় অনেককে।

রোববার (৯ এপ্রিল) বঙ্গবাজারে কথা হয় ১৪৭৭ নম্বর দোকানের স্বত্বাধিকারী মোঃ নান্নু মিয়ার সাথে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমাদের ভরপুর আয়োজন ছিলো। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ কাপড় কিনে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। সবধরনের কালেকশন করেছি কিন্তু কোন কিছু বিক্রি করতে পারি নাই। যা টাকা পয়সা ছিল সবকিছু জিনিসপত্রের মধ্যেই লগ্নি করেছি। আগুনে আমাদের সবই হারাইছি। কোন কিছুই বাকি নাই। আগুন লাগার আগের দিন শুধু বারোশো টাকা নিয়ে বের হয়েছি এই টাকার ওপর এখন পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় ঘুরছি। আমাদের আর কিছুই বাকি নাই। সবই শেষ। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। পরিবারের সাথেও আমাদের এখন দেখা করার সুযোগ নেই। কি নিয়ে যাবো তাদের কাছে সেটা ভেবেই হয়রান। 

কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে: ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী মুন্না মিয়া। ছবি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস

পরিবার-পরিজনদের জন্য ঈদ উপলক্ষে কোন কেনাকাটা করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের জন্য কোন কেনাকাটা করি নাই। শুধু ছোট ছেলের জন্য একজোড়া জুতা আর মেয়ের জন্য একটা থ্রি-পিস কিনেছিলাম এই মার্কেট থেকেই। সেগুলোও দোকানে রাখা ছিলো। আগুনে সেসব কিছুও পুড়ে গেছে। এখন আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নাই।

আরও পড়ুন: বঙ্গবাজার ব্যবসায়ীদের ২০ লাখ টাকা দিলেন হিজড়া সম্প্রদায়

তিনি বলেন, আমার নাই বলতে এখন কিছুই নাই। হাত পা আর দোকানের চাবি ছাড়া কোন কিছুই নাই। আমি চোখ বন্ধ করলে আগুনে পোড়া ছাড়া আমার কিছুই দেখতে পাইনা। আমার চোখের সামনে আগুনে সব পুড়ে গেল কিছুই করতে পারিনি। ২২ বছর ধরে ব্যবসা করি বঙ্গবাজারে। অনেক আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে এখানে। 

কি পরিমান টাকার ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোকানে সর্বমোট ৯ লাখ টাকার কাপড় আগুনে পুড়েছে। গোডাউনে আরো ৫ লাখ টাকার কাপড় ছিলো সেসব কিছুও পুড়েছে। আমরা এখন বুঝতে পারছিনা কি করব। যদি এই দুর্ঘটনা ঈদের পরে হতো তাহলে আমদের ক্ষতি কিছুটা হলেও কম হতো। কষ্ট কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারতাম। কিন্তু এখন তো আমাদের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।

এই মুহূর্তে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন,  আমরা চাই সরকার যেন এই বঙ্গবাজারেই আমাদের কর্মস্থল ঠিক করে দেয়।  সবাই এখন এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। সারাজীবনের  সব উপার্জন হারিয়ে আমরা এখন রাস্তার ফকির হয়ে গেছি। আমাদের আর হারানোর কিছু নাই। সামনে ঈদ। আমার দোকানের দুজন কর্মচারী আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈদের আগে তাদের বেতনের সমপরিমাণ টাকা আমরা বোনাস হিসেবে দিয়ে দিতাম, যাতে করে পরিবার পরিজন আনন্দ ভালোভাবে ঈদ উপভোগ করতে পারেন। এই মুহূর্তে আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের গন্তব্যের দিকে তাকিয়ে বসে আছি।

সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বঙ্গবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান ও কাপড়ের পরিত্যক্ত অংশ। ছবি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস

অপরদিকে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে জন্য  ১ কোটি টাকা অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বঙ্গবাজারে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এই ঘোষণা দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে এগিয়ে আসতে দেশের সকল ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

এসময় এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই এর পরিচালক সহ ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে বলেও জানান  বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

তিনি জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাহায্যার্থে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (আইএফআইসি) ব্যাংকের ওই সঞ্চয়ী হিসাব নম্বরের (০২০০০৯৪০৬৬০৩১) মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে যে কেউ অর্থ সাহায্য পাঠাতে পারবেন। ওই অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকা প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবাজারের আগুনের উত্তাপ ছড়িয়েছে ঢাকার বাইরেও

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা তৈরি আর ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে আমরা তাদের বুঝিয়ে দেব। তারাই টাকা বণ্টন করবেন।

এছাড়াও বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া মালামাল বিশেষ করে টিন ও লোহাগুলো প্রায় ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। ওই টাকাও নতুন ব্যাংক একাউন্টে চলে যাবে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ