বঙ্গবাজার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও আগুনে ভস্মীভূত বর্তমান
ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত বঙ্গবাজার মূলত তৈরি পোশাক বিক্রির বাজার হলেও শুরুতে বঙ্গবাজার তৈরি পোশাকের বাজার ছিল না। ১৯৬৫ সালে ঢাকার প্রধান রেলস্টেশনের একেবারে সংলগ্ন হওয়ায় জায়গাটি নানা ধরনের খুচরা পণ্যের হকার ও ছোট দোকানদারদের ব্যবসায় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। সে সময় ফুলবাড়িয়া ছিল হালকা খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রির আদর্শ স্থান।
বাংলাপিডিয়ার মতে, বাজার গড়ে ওঠার চার বছরের মধ্যেই ফুলবাড়িয়া থেকে রেলস্টেশন কমলাপুরে সরিয়ে নেওয়া হলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংযোগস্থল হওয়ায় স্থানটির গুরুত্ব আগের মতোই রয়ে যায়। ফলে হকার ও অন্য দোকানদারেরা এখানে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেন। তাদের অনেকেই আবার অবৈধভাবে অস্থায়ী টিনশেড তৈরি করেন।
১৯৭৫ সালে ঢাকা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সব ধরনের টিনশেড ও অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে দিয়ে এখানে একটি পাকা বাজার গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ জায়গাটির মালিকানা ছাড়তে অস্বীকার করলে দোকানমালিকেরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বার্ষিক ইজারা চুক্তির ভিত্তিতে খণ্ড খণ্ড জায়গায় নিজ নিজ দোকান বসানোর অধিকার লাভ করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালে সিটি কর্পোরেশন জায়গাটির মালিকানা পায় এবং ১৯৮৯ সালের মধ্যে পরিকল্পিত পাকা বিপণীকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ করে। নতুনভাবে তৈরি বাজারটির মোট আয়তন ছিল ২১ হাজার ২৫০ বর্গফুট।
বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ইতিহাস অনেক পুরোনো। এ নিয়ে তৃতীয়বার বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে দুবারেই পুরো বাজার পুড়ে একবারে ছাই হয়ে গেছে।
ঢাকার বঙ্গবাজারে প্রথম ভয়াবহ আগুন লেগেছিল ১৯৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর। তখন এখানে চারটি হকার্স মার্কেট ছিল। দোকানের সংখ্যা ছিল ৫২৫। তখন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাক্রম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে: শিক্ষামন্ত্রী।
১৯৯৫ সালের অগ্নিকান্ডের ঘটনার মত এবারেও সেই দৃশ্য দেখা গেছে বঙ্গবাজারে। সেবারও কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ব্যবসায়ীদের আহাজারি রয়ে গেছে একই। সেই বঙ্গবাজারও একসময় ঘুরে দাঁড়িয়ে উজ্জীবিত হয়েছিল নতুন এক রুপে। পরবর্তীতে নতুন আদলে গড়ে তোলা হয় ওই মার্কেট। অপরিকল্পিতভাবে বাড়তে থাকে এর পরিধিও। কিন্তু সেই আগুন থেকে রেহাই পায়নি এবারও।
এছাড়াও বঙ্গবাজারে ২০১৮ সালেও আরেকবার আগুন লেগেছিল। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের গুলিস্তান ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেসময় ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা করে সকাল ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার পর মার্কেট কর্তৃপক্ষকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুই দফা নোটিশ দেয়া হয়।
৪ এপ্রিল, সেই দুর্বিষহ দিন: ৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুনে আশপাশের মার্কেটসহ বঙ্গবাজারের চারটি মার্কেটের হাজার হাজার দোকান পুড়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বিমান বাহিনী, সেনা, নৌ ও বিজিবির ফায়ার ফাইটার টিম ও ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকারও অধিক। জানা গেছে মার্কেটগুলোতে সব মিলিয়ে মোট দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০ টি। এই দোকানগুলোতে ছিল কর্মচারী ও ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মস্থল। চার এপ্রিলের ঘটনায় কর্মহীন এই ৫০ হাজার মানুষ।